Friday, January 5

ঢাবির ভর্তিতে ট্রান্সজেন্ডার কোটার 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দ নিয়ে আপত্তি শিক্ষার্থীদের

নানা আলোচনা-সমালোচনা ও আন্দোলনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তিতে ট্রান্সজেন্ডার/হিজড়া কোটার জন্য কারা প্রযোজ্য হবে তা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রশাসনের ব্যাখ্যা করাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দটি নিয়ে বিভ্রান্তির আশঙ্কা করছেন এই শিক্ষার্থীরা। তারা এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় বসতে চাচ্ছেন।




বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দটি প্রত্যাহার ও সংশোধিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার মাধ্যমে বিতর্কের নিরসন করার দাবিতে চলমান অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে একথা জানান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।




তাদের এই বিবৃতিতে বলা হয়, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ সেশনের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে কোটার অংশে হিজড়া বোঝাতে ট্রান্সজেন্ডার শব্দের অন্তর্ভুক্তি যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল তার নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে আজ একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। আমরা এই বিজ্ঞপ্তিকে সাধুবাদ জানাচ্ছি এবং আমাদের অবস্থান কর্মসূচি আজকের মত স্থগিত ঘোষণা করছি। আমরা মনে করি, ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি নিয়ে এখনো বিভ্রান্তির সুযোগ রয়েছে। তাই, সে বিভ্রান্তি নিরসনে অবিলম্বে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে এই ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি প্রত্যাহার জরুরী। কেননা পৃথিবীর প্রায় সকল অভিধান ট্রান্সজেন্ডার শব্দের যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যাখ্যার সম্পূর্ণ বিপরীত।'




শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমরা মনে করি, এই শব্দের মাধ্যমে এখনো বিভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে। তাই, আমরা অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে মাননীয় প্রক্টর স্যারের সাথে দেখা করেছি। দেখা করে এই বিভ্রান্তি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে উন্মুক্ত আলোচনায় বসার জন্য সময় চেয়েছি। মাননীয় প্রক্টর মহোদয় আমাদেরকে বলেছেন নির্বাচনের পরে তিনি আমাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের একটি উন্মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করবেন। আমরা সে উন্মুক্ত আলোচনার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই। উক্ত উন্মুক্ত আলোচনায় যদি এই বিতর্কের নিরসন সম্ভব না হয় তাহলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চতুর্থ দফায় পূর্বোক্ত কর্মসূচির চেয়েও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তবে আমরা আশা রাখি, এই উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমেই চলমান বিতর্কের নিরসন সম্ভব হবে।'




বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, 'আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি শতভাগ আস্থা রেখে বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকল সময়েই যেকোনো ইস্যুর নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে। কিন্তু যদি আমাদের দাবি শান্তিপূর্ণ উপায়ে মেনে নেওয়া না হয় তাহলে, শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে এবং কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে তবেই পড়ার টেবিল ফিরে যাবে।'






বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আইন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া, আরবি বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান রাফি, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী এবি যুবাইর ও বাংলা বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ এই বিবৃতিটি প্রদান করেন।




অন্যদিকে, সকালে দেওয়া জনসংযোগ দফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর ২১/১২/২০২৩ তারিখের পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে ট্রান্সজেন্ডার/হিজড়া কোটায় ভর্তি বিষয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এ বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে, ২০২২-২০২৩ সেশন থেকে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার/হিজড়া কোটা প্রচলন করা হয়। কেবলমাত্র জন্মগতভাবে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের অধিকারী শিক্ষার্থীরা ট্রান্সজেন্ডার/হিজড়া কোটায় ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কোটা শনাক্তকরণে সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রদত্ত হিজড়া (গেজেট নং সকম/কর্ম- ১শা হিজড়া-১৫-২০১৩-৪০) পরিচয়পত্র অবশ্যই দাখিল করতে হবে।'




এর আগে, গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিল করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। একইসাথে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বরাবর একটি স্মারকলিপিও প্রদান করে তারা।




স্মারকলিপিতে উল্লিখিত শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলো ছিলো- অনতিবিলম্বে ভর্তি পরীক্ষায় ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিল করা; অতি দ্রুত এই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা; হিজরা জনগোষ্ঠীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বিঘ্নে পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া এবং ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়ধারীদের কোটা ব্যবস্থায় আনার মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদকে প্রমোট করে আইন এবং সংবিধান বিরোধী কাজ করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা চাওয়া প্রভৃতি।




এরপর, গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দটি প্রত্যাহার ও সংশোধিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার মাধ্যমে চলমান বিতর্কের নিরসন করার দাবিতে সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন কিছু শিক্ষার্থী।




সর্বশেষ, গত বুধবার (৩ জানুয়ারি) একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করে এই শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, শুরু থেকেই বিভিন্ন ইসলামী ছাত্র সংগঠন বিতর্কিত এই ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলের দাবিতে কথা বলে আসছে। যার প্রেক্ষিতেই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করলো।

https://www.dailybhorerdak.com/details.php?id=227449&fbclid=IwAR0EUsuS_7k2hTYuwajIC9e5K_6reRwqCITmCGAxkO6LQmCpfJmEPhfrom4

No comments:

Post a Comment