Friday, September 22

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-বাবাহারা শিশুটিকে হাসপাতালে নেন তৃতীয় লিঙ্গের দুইজন

ঢাকায় শরবত-ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতেন বরিশালের মিজান (৩৫)। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঝিলপাড় বস্তিতে থাকতেন। পরিবারসহ বরিশাল থেকে লঞ্চে করে গতকাল ঢাকায় ফিরেছেন। এরপর যান শ্বশুরবাড়িতে। সেখান থেকে সন্ধ্যার পর ফিরছিলেন বাসায়। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক-গলিতে পানি জমে যায়। বৃষ্টির মধ্যে জমে থাকা পানি ঠেলেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুর কমার্স কলেজ–সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশের রাস্তায় আসার পর বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা (২৫) ও মেয়ে লিমা (৭)।

তবে আহত হলেও বেঁচে আছে মিজান-মুক্তা দম্পতির সাত মাসের ছেলে হোসাইন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তৃতীয় লিঙ্গের আমিনা ও বৃষ্টি।

মিজানের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন মোহাম্মদ অনিক (১৮) নামের স্থানীয় এক তরুণ।

ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৃতীয় লিঙ্গের বৃষ্টি ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, ঘটনার সময় তারা বাসায় ছিলেন। বাইরে হইচই শুনে বাসা থেকে বের হন। বের হয়ে শোনেন, কয়েকজন মারা গেছেন। তখন দেখতে পান, ছোট একটা বাচ্চা পানিতে ভাসছে। পানি থেকে বাচ্চাটিকে একজন তুলে নিয়ে আসেন।

তিনি বলেন, “আশপাশের নারীরা বাচ্চাটিকে বাসায় নিয়ে তেল মাখিয়ে দেয়। কিন্তু তখন তার নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। তাই হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কে নিয়ে যাবে হাসপাতালে? এই দোটানা দেখে আমি ও আমিনা বাচ্চাটিকে নিয়ে হাসপাতালে আসি।”

তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসকরা শিশুটিকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করান। সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সকালে হোসাইনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর আমরা তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে মর্গে শিশুটির বাবা, মা ও বোনের লাশ রয়েছে। অন্য স্বজনেরা সেখানে এসেছেন। বর্তমানে শিশুটি তাদের কাছে রয়েছে।”

শিশু হোসাইনকে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি ঢাকা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

No comments:

Post a Comment