বলৎকারের শিকার হয়ে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে হাফেজ শরিফুল ইসলাম (১৪) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করা হয়েছে, "শরিফুল ইসলামের মলদ্বার অস্বাভাবিক। মলদ্বার দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সে মলদ্বার দিয়ে ইতিপূর্বে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলো। তবে বিষয়টি কাউকে বলতে না পেরে নিজের উপর অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে।"
সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শরিফুল ইসলামসহ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ। পরবর্তিতে মধ্যরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হাজী আমির হোসেনের ছেলে শরিফুল। কামরাঙ্গীরচর পূর্ব রসুলপুর ৯ নম্বর গলির ৬/এ নম্বর ৯ তলা বাড়ির ষষ্ঠ তলায় পরিবারের সাথে থাকতো সে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট শরিফুল।
কামরাঙ্গীরচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আশরাফুল হক সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, "শরিফুল ইসলামের মলদ্বার অস্বাভাবিক। মলদ্বার দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সে মলদ্বার দিয়ে ইতিপূর্বে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলো। তবে বিষয়টি কাউকে বলতে না পেরে নিজের উপর অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে।"
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এই পুলিশ কর্মকর্তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, "এমন কিছুই হয়নি"।
এদিকে মৃত শরিফুল ইসলামের বড় ভাই শাহিন হাসান জানান, আলিনগরের জামিয়া নূরানীয়া ইসলামিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়তো শরিফুল। গত শুক্রবার সে হাফেজ পড়া সম্পন্ন করে। ওই রাতেই সে বাড়িতে আসে। এরপর সব কিছু স্বাভাবিক চলছিলো। সোমবার বিকেলে তার বাবা তাকে আবার মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য বললে তখন শরিফুল তাকে জানায়, আজ মঙ্গলবার মাদ্রাসায় যাবে সে। এরপর রাত দশটার দিকে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও দরজা না খোলায় তাদের সন্দেহ হলে তাকে ডাকাডাকি শুরু করেন। পরবর্তীতে রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখেন ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে সে। তখন তারা তাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নিচে নামায়।
যৌন নিপীপড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বড় ভাই শাহিন বলেন, বিষয়টি পুলিশের মাধ্যমেই কিছুটা শুনেছেন। তবে বিস্তারিত কিছু জানেন না তিনি। এরআগে মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মারধর করার কথা তাদেরকে জানিয়েছিলো শরিফুল। সে সময় মারধরের ঘটনাটি কাউকে জানাতেও নিষেধ করেছিলেন শিক্ষকরা।
এদিকে কামরাঙ্গীরচর থানার আরেক উপপরিদর্শক (এসআই) অনিরুদ্ধ রায় জানান, ঝাউচর "আমরা টাওয়ার" গলির বদ্দার বাড়ির নিচ তলার বাসা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাছিবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, গত ২-৩ মাস আগেই অটোরিকশা চালক হাছিব ইভা নামে এক কিশোরীকে বিয়ে করে। প্রেমের সম্পর্কটি পরবর্তিতে পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়। ইভা স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করে। ঝাউচরের ওই বাসায় স্বামী-স্ত্রী একটি রুম নিয়ে ভাড়া থাকতো। তবে কয়েকদিন ধরে তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। গতকাল সোমবার তার স্ত্রী রাগ করে বাবার বাসায় চলে গেলে বিকেল পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে দরজা বন্ধ করে ফ্যানের হুকের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয় সে। খবর পেয়ে ওই বাসায় গিয়ে "কাটার গ্যান্ডিং মেশিন" দিয়ে দরজা কেটে রুমের ভিতর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
হাছিবের বাবার নাম সিরাজ মিয়া। তার বাবা মা হাজারীবাগ এলাকায় থাকেন।
No comments:
Post a Comment