বিশ্বনাথে নিহত কিশোর সিয়াম হত্যার দ্রুত সময়ে রহস্য উদঘাটন করেছে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বিশ্বনাথ থানার রামপাশা ইউনিয়নের এফসি ব্রিকস হতে পূর্বদিকে হয়দরপুর হাওরের মাঝখানে পাঁচলার খাল এর পূর্ব পাড়ে ঝোপের মধ্যে পাওয়া কিশোর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও মূল হত্যাকারীকে আটক করেছে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ।
রবিবার দুপুরে বিশ্বনাথ থানায় প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসমানীনগর সার্কেল এডিশনাল এসপি আশরাফুজ্জান।
কিশোর সিয়াম কে জোরপূর্বক বলাৎকার শেষে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের কান্দি উত্তর আজিজ নগরের আরকুম আলী (৪০) নামের ঘাতক। আরকুম আলী মৃত আছদ্দর আলীর ছেলে বলে জানা গেছে। আটকের পর কিশোরকে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার দায় ও স্বীকার করেছে সে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে : শনিবার ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বনাথ থানার রামপাশা ইউনিয়নের এফসি ব্রিকস হতে পূর্বদিকে হয়দরপুর হাওরের মাঝখানে পাঁচলার খাল এর পূর্ব পাড়ে ঝোপের মধ্যে থেকে ১৬ বছরের এক কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
প্রথমে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অজ্ঞাত মৃত কিশোরের পরিচয় সনাক্ত করার চেষ্টা করে। তখন ইয়ামিন নামে একটি ছেলে ঘটনাস্থলে পৌছায় এবং লাশটি দেখে তার ভাই সিয়ামের লাশ মর্মে চিহ্নিত করে। ইয়ামিন তখন জানায় তার বাবা ভাই এবং সে গত দেড়মাস পূর্ব থেকে রামপাশা এফসি ব্রিকস-এ কাজ করে আসছে। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার করাতকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। প্রাথমিকভাবে লাশের পরিচয় সনাক্তের পর সুরতহাল প্রস্তুত করে লাশের ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে পুলিশ ।পাশাপাশি ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামীকে গ্রেফতারে তদন্ত শুরু করে এবং আরকুম আলী কে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম কে হত্যার বর্ণনা দেয় আরকুম আলী।
জানা যায় ২০ ডিসেম্বর হত্যার দিন সিয়াম সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যার পরে গোসল করে পরিষ্কার কাপড়চোপড় পরে ইটভাটা হতে বের হয়। পাশেই একটি মসজিদের ওয়াজ মাহফিল চলছিল। এরপর সে আর ফিরে আসেনি। ইটভাটায় থাকা তার ওপর মেজ ভাই ইয়ামিন ভাবে যে তার ভাই ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছে। কিন্তু রাত বাড়তে থাকে এবং সিয়াম ফিরে না আসায় ইয়াসিন সিয়ামের খোঁজ করতে থাকে। মূলত রাত ০৮.০০ ঘটিকার পর থেকে সিয়ামের খোঁজ কেউ পাচ্ছিল না। পরবর্তীতে গত ২৩/১২/২০২৩খ্রিঃ ব্রিকস ফিল্ডের পাশের হাওরে লাশ প্রাপ্তির সংবাদে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উৎসুক জনতার পাশাপাশি নিখোঁজ সিয়ামের ভাই ইয়ামিন ও ব্রিকস ফিল্ডের লোকজন ঘটনাস্থলে যায় এবং ঘটনাস্থলে পাওয়া লাশটি তার ভাই সিয়ামের বলে সনাক্ত করে। উক্ত ঘটনায় তার বাবা ২৩/১২/২০২৩খ্রিঃ রাতে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৮/১৭৫, তারিখ- ২৪/১২/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। এর পর পুলিশ অধিকতর অভিযান চালিয়ে একপর্যায়ে গোপন সূত্র মারফত তথ্য প্রাপ্ত হয়ে ২৪/১২/২০২৩খ্রিঃ রাত ৩ ঘটিকার সময় আরকুম আলীকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরকুম আলী জানায় সে একই ইট ভাটাতে মাটি আনলোডের কাজ করে। ইট ভাটাতেই কাজের সুবাদে সিয়ামের সাথে তার পরিচয় হয়। গত ২০/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সিয়ামের বাবা, ভাই তার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সংবাদ প্রাপ্ত হইলে আসামী আরকুম আলী সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভিকটিম সিয়ামকে বলাৎকার করার ফন্দি আটে। পরিকল্পনা মোতাবেক আরকুম আলী সিয়ামকে নিয়ে গোপন জায়গায় যাওয়ার কথা বলে। রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় ব্রিকস ফিল্ডের নিকটবর্তী পূর্বপাশের কবরস্থানের রাস্তার পাশ দিয়ে হয়দরপুর হাওরে ঘটনাস্থলে যায়। নদী পার হয়ে পশ্চিম পাশে যাওয়ার কথা বলে আসামী আরকুম আলী সিয়ামকে তার পরিহিত প্যান্ট শার্ট খোলার জন্য বলে। ভিকটিম সিয়াম আসামীর কথামত তার পরিহিত কাপড় চোপড় খোললে আসামী আরকুম আলী ভিকটিমকে বলাৎকার করার উদ্দেশ্যে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে। ভিকটিম জোর জবরদস্তি শুরু করলে সিয়ামকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। একপর্যায়ে আসামী আরকুম আলী ভিকটিম সিয়ামকে জোরপূর্বক বলাৎকার করে। ভিকটিম সিয়াম তখন কান্নাকাটি করে উক্ত ঘটনা তার বাবা ও ব্রিক ফিল্ডের ম্যানেজারের নিকট বিচার দিবে বললে ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে নিজেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সিয়ামের সাথে থাকা টাওয়াল দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর ভিকটিমের লাশ ঝোপের মধ্যে ফেলে রাখে। প্যান্ট ও জুতা নদীতে ফেলে রাখে। কাজ শেষ করে সে নদী পার হয়ে পশ্চিম পাশে এসে টাওয়ালটি পশ্চিম পারে ডুবার মধ্যে ফেলে রাখে এবং অনুমান ঘটনাস্থলের দুইশ মিটার পশ্চিমে কচুরিপানার ভিতর শার্ট লুকিয়ে রাখে।
তার দেওয়া জবানবন্দি ও তথ্য মতে আজ সকালে আসামীর দেখানো স্থান থেকে উক্ত আলামতগুলো উদ্ধার করেছে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ।
No comments:
Post a Comment