এসব বিষয়ে আলোচনা করার আগে দরকার টার্মিনোলজি সমন্ধে পরিষ্কার ধারণা। হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার কোনোভাবেই এক নয়। এই দুই শ্রেণির মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। মেডিকেলের পরিভাষায় হিজড়াদের লিঙ্গকে বলে ইন্টারসেক্স। এই লিঙ্গের মানুষেরা হারমাফ্রোডাইট নামেও পরিচিত। এদের শরীরে গঠনগতভাবে পুরুষ এবং মহিলা জননাঙ্গ এবং হরমোনের মিশেল থাকে, তাই এককভাবে তাদের পুরুষ বা মহিলা লিঙ্গে বিভক্ত করা যায় না। অন্যদিকে, ট্রান্সজেন্ডাররা হলো সিসজেন্ডারের বিপরীত। সিসজেন্ডার টার্মটা ব্যবহার করা হয় তখন যখন একজন পুরুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে পরবর্তিতে নিজেকে পুরুষ হিসেবে ভাবে বা পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। একই টার্মটি সিসজেন্ডার নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ট্রান্সজেন্ডারদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণই উল্টো। একজন মানুষ যখন পুরুষ জননাঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে পরবর্তিতে নিজেকে নারী হিসেবে পরিচয় দিতে এবং ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তখন তাদের আমরা ট্রান্সজেন্ডার নারী বলি। একইভাবে একজন নারী জননাঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে পরবর্তিতে নিজেকে পুরুষ হিসেবে দাবি করলে তাকে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ বলা হয়।
অর্থাৎ ট্রান্সজেন্ডার নারী বা পুরুষকে কোনো বিশেষ লিঙ্গে আখ্যায়িত করতে হলে সেই ব্যক্তির অভিমতকে প্রাধান্য দিতে হবে। শুধু দৈহিক অবয়ব দেখে একজন ট্রান্সজেন্ডারের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায় না। অন্যদিকে একজন হিজড়াকে তার প্রাইমারি সেক্স অর্গান (অন্ডোকোষ এবং ডিম্বাশয়), সেকেন্ডারি সেক্স অর্গান (শিশ্ন, যোনি ইত্যাদি), শারীরিক গঠন এবং হরমোন পরীক্ষা করে সহজেই নির্ণয় করা যায়। সে ক্ষেত্রে তার মতামতের তেমন একটা প্রয়োজন পরে না। এই বিষয় বোঝা এবং আলোচনা করার জন্য ‘সেক্স’ এবং ‘জেন্ডার’ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
সেক্স টার্মটি হচ্ছে বায়োলজিক্যাল। একটি বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার জননাঙ্গ দেখে তার সেক্স নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে জেন্ডার টার্মটির সঙ্গে মানবিক অধিকার (হিউম্যান রাইটস), সামাজিক রীতিনীতি এবং আইনগত বা লিগ্যাল ইস্যু ওতপ্রতভাবে জড়িত। জেন্ডার আইডেন্টিটি যখন সেক্স আইডেন্টিটির সঙ্গে এক ধারায় থাকে তখন তাকে সিসজেন্ডার বলে, যেটা সমাজে নরমাল বা স্বাভাবিক লিঙ্গ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু যখনই জেন্ডার আইডেন্টিটি সেক্স আইডেন্টিটির বিপরিত হয় তখন তাকে ট্রান্সজেন্ডার বলে যে লিঙ্গ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে। হিজড়াগণ না সিসজেন্ডার, না ট্রান্সজেন্টার। তারা সম্পূর্ণই ভিন্ন। তারা ইন্টারসেক্স। তবে একজন হিজড়া যদি নিজেকে পুরুষ হিসেবে পরিচয় দিতে চায় তখন কী হবে? তখনই চলে আসবে জেন্ডার ইস্যুটি। আলোচনা হবে ভিন্ন আঙ্গিকে।
No comments:
Post a Comment