Friday, December 15

মানবাধিকারকর্মী আল আমিনের মুক্তি দাবি

বাংলাদেশি অভিবাসীদের সুরক্ষা ও অধিকারের কাজে নিয়োজিত সুপরিচিত এক কর্মী আল আমিন নয়নের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনায় অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ২০টি সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে, এ ধরনের মামলা দায়ের ও আদালত বন্ধকালীন সময়ে জেলে পাঠানোর ঘটনায় নিন্দা এবং অতি দ্রুত এ মামলা প্রত্যাহার করে তাকে মুক্তির দাবি জানান বিসিএসএম।

বিবৃতিতে বলা হয়, আল আমিন ২০১৭ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। তবে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এক দশক আগের একটি ঘটনায়। ২০১৩ সালের ওই সময়ে নয়ন শিসউক নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানটি তখন মানব পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দিতেন। কারণ বলা হয়েছে, তিনি ইরাক থেকে ফেরত আসা কয়েকজন ভুক্তভোগীকে আদালতে মামলা দায়ের করতে প্ররোচনা দিয়েছিলেন। অথচ মানবাধিকারকর্মী হিসেবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোই একজন কর্মীর কাজ। তাই তার বিরুদ্ধে যে মামলাটি হয়েছে সেটি হয়রানিমূলক বলেই প্রতীয়মান।

বিসিএসএম বলছে, আমরা জানতে পেরেছি গত বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশ আল আমিন নয়নকে জানায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এরপর বিকেলেই তাকে নিম্নআদালতে হাজির করা হলে, মামলার মূল নথি না থাকার কারণে তিনি জামিন পাবেন না বলে জানানো হয়। মামলাটি যেহেতু ঢাকার মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে সেখানে তাকে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতে বার্ষিক ছুটি চলমান থাকায় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের আগে মানবপাচারের ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হবে না। ফলে নয়নকে ওই রাতেই কেরানীগঞ্জের কারাগারে প্রেরণ করা হয়।






বিবৃতিতে জানানো হয়, আমরা জানতে পেরেছি নয়নকে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ১৫ (১) ধারায় আসামি করা হয়েছে। কেউ মিথ্যা মামলা দায়ের করলে বা মিথ্যা মামলা দায়েরে বাধ্য করলে এই ধারায় আসামি করা যায়। অথচ নয়নের বিরুদ্ধে এই ধারার অপপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। আর মিথ্যা মামলার অভিযোগে নতুন করে মামলা করতে গেলে সাধারণত আগের মামলার বাদীকে আসামি করা হয়। সাক্ষীকেও আসামি হিসেবে আদালত গ্রহণ করে না। অথচ নয়ন এই মামলায় বাদী বা সাক্ষী কিছুই ছিলেন না। কিন্তু প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে এবং মানবপাচার ট্রাইব্যুনালসহ আদালত যখন অবকাশে সেই সময় তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

বিসিএসএম আরও জানায়, নয়নের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ এই মামলায় আমরা খুবই বিস্ময় প্রকাশ করছি। একজন মানবাধিকারকর্মী যখন যেখানে কাজ করেন তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের হয়ে ভুক্তভোগীদের পাশে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। আমরা দেখেছি ইরাকে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কাজ করায় এর আগে রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককেও একইভাবে গ্রেপ্তার করে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছিল। এমন একজন মানুষকে জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনা ভীষণ নিন্দনীয়। আমরা অচিরেই এই মামলা প্রত্যাহার এবং আল আমিন নয়নের মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

নয়ন তার সততা ও নিষ্ঠার জন্য ২০২৩ সালে ব্র্যাকের স্যার ফজলে হাসান আবেদ মূল্যবোধ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর আগে ২০২০ সালে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপি তাকে পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
https://www.kalbela.com/national/48994

No comments:

Post a Comment