নাটোরে মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে প্রায় ৬ মাস আগে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক কর্মচারী সাজ্জাদ হোসেন রুবেলকে কৌশলে ডেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারই দুই বন্ধু হৃদয় হোসেন ও তারেক রহমান। এক পর্যায়ে তারা রুবেলকে সমকামিতার ফাঁদে ফেলে পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করে। এই সময়ে রুবেলের পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফা ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।
পরে টাকা না পাওয়ার সম্ভাবনা দেখে ঘুমের ঔষধ খাওয়ানোর পর রুবেলকে হত্যা করে মরদেহটি মাটিচাপা দিয়ে তারা এলাকা ছাড়া হয়। এরপর আর রুবেলের সন্ধান মেলে না। এ নিয়ে সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা রুজু হয়।
অবশেষে ঢাকার একটি হত্যা মামলায় হৃদয় হোসেন ও তারেক গ্রেফতার হওয়ার পর স্বীকারোক্তিতে নাটোরে মাটিতে পুঁতে রাখা রুবেল হোসেনের মরদেহ উত্তোলন করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত বেড়িয়ে আসে ব্যাংক কর্মচারী সাজ্জাদ হোসেন রুবেলের নিখোঁজ হওয়া এবং হত্যার আসল রহস্য।
গত শনিবার (২০) দিনগত রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার রুয়েরভাগ এলাকায় অভিযুক্ত তারেকের বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে পলিথিনে মোড়ানো রুবেলের গলিত মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশের যৌথ টিম। ব্যাংকার রুবেল হোসেন নাটোর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর আমহাটি এলাকার রফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক নাটোর শাখার কর্মচারী ছিলেন। আর হৃদয় ও তারেক বাগাতিপাড়া উপজেলা এলাকার বাসিন্দা।
নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা আক্তার নেলী জানান, রুবেল হোসেন, হৃদয় হোসেন ও তারেক রহমান তিনজন বন্ধু। মুক্তিপণের টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে রুবেলের অপর দুই বন্ধু হৃদয় ও তারেক গত বছরের ১১ নভেম্বর রুবেলকে কৌশলে ডেকে নিয়ে অপহরণ করে তাদের হেফাজতে রাখেন। পরে তারা তারেকের রুয়ের ভাগের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। এক পর্যায়ে তারা রুবেলকে সমকামিতার ফাঁদে ফেলে পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করে।
তিনি জানিয়েছেন, এই সময়ে রুবেলের পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফা ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। পরে ঘুমের ঔষধ খাওয়ানোর পর রুবেলকে হত্যা করে মরদেহটি মাটি চাপা দেয়। এরপর আর সাড়া না পেয়ে রুবেলের বাবা রফিজ উদ্দিন গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নাটোর সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। কিন্তু কোন ক্লু না পেয়ে মামলাটি চলতি বছরে ১০মে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবিতে) হস্তান্তর করা হয়।
তার দাবি, অন্য একটি অপহরণ মামলায় গত মঙ্গলবার (১৬ মে) নোয়াখালীর মাইজদী থেকে অপহরণ ও সমকামী চক্রের দুই সদস্য তারেক ও হৃদয়কে আটক করে ঢাকার দক্ষিণখান থানা পুলিশ। ওই হত্যার পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে নাটোরের ব্যাংক কর্মচারী রুবেল হত্যার রহস্য। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একজন ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণখান থানা পুলিশ ও নাটোরের ডিবি পুলিশ অভিযুক্তদের সাথে নিয়ে তারেকের বাড়ির পেছন থেকে পুঁতে রাখা রুবেলের মরদেহ উত্তোলন করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, আসামিরা বর্তমানে দক্ষিণখান থানা পুলিশের তত্ত্বাবধানে আছে। কারণ তারা সেখানকার মামলার রিমান্ডের আসামি। তাদের রিমান্ড শেষ হলে আদালতের মাধ্যমে রুবেল হত্যার বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। আপাতত মামলার তদন্ত কার্যক্রম ও আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। ময়নাতদন্ত শেষ হলে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
https://www.odhikar.news/country-news/242220?fbclid=IwAR10u2heYYeV8vJpMb-HQ7Lnsx2CAX5O3cYIZ_UJNjFkvwx5VwjoafYjR4g
No comments:
Post a Comment