চুনারুঘাটে বালুমহালে মোবাইল কোর্টের অভিযানের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ৩ টেলিভিশন সাংবাদিক। এসময় হামলাকালিরা ছিনিয়ে নিয়েছে সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও মোবাইল।
বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের বনগাঁও এলাকা এ ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভা করেছে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব ও টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন। সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠন দুটির নেতৃবৃন্দ।
জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার বনগাঁও গোদারাঘাট পয়েন্টে খোয়াই নদী থেকে সেলিম আহমদের নেতৃত্বে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিলো। ইজারার নয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সেলিমের নেতৃত্বাধিন চক্রটি ৬টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছিল। বালু বহনের জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ ট্রাক্টর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু উত্তোলনের কারণে নানারকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। বালু বহনের জন্য ভারি ট্রাক্টর ও ট্রাক ব্যবহারের কারণে ভেঙে যাচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট। পাশাপাশি ধুলা-বালিতে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে চারপাশ। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিকট শব্দে চলা ট্রাক্টরগুলোর কারণে আতঙ্কে থাকে শিশুরা।
স্থানীয়দের নানা অভিযোগের ভিত্তিতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আফিয়া আমিন পাপ্পাকে নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক। তার নির্দেশে বুধবার বেলা ১টার দিকে ওই মহালে অভিযানে যান সহকারি কমিশনার আফিয়া আমিন পাপ্পা। কিন্তু পুলিশ ছাড়াই তিনি অভিযানে যান।
সহকারি কমিশনার বালু মহালে পৌঁছার আগেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন সেলিম আহমদ, চুনারুঘাট পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আব্দুল হান্নান, জাহাঙ্গীর ও তোফাজ্জল। এছাড়াও একজন সাবেক জনপ্রতিনিধিসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
এসময় স্থানীয়দের চাপে রাস্তার পাশ থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন সহকারি কমিশনার পাপ্পা।।
বালু মহাল ইজারা শর্তের ১১ নম্বরে উল্লেখ রয়েছে- ‘ইজারা কর্তৃক পরিবেশ বিধ্বংসী পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করা হলে বা পরিবেশের কোন ক্ষতি করা হলে লিজ তাৎক্ষণিক বাতিল বলে গণ্য হবে’। অথচ সহকারি কমিশনারের সামনেই বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিল।
এ ব্যাপারে সহকারি কমিশনার (ভূমি) আফিয়া আমিন পাপ্পা বলেন, ‘পরিবেশ বিধ্বংসী কোন কিছু ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে আপনাকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে। এছাড়া সীমানা লঙ্ঘনের দায়ে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা সহকারি কমিশনারের কাছে অভিযোগ জানান- ট্রাক্টর দিয়ে বালু বহনের কারণে রাস্তা ভেঙে ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মহাল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ওই জায়গাটি দেখতে যান সহকারি কমিশনার পাপ্পা। সেখানে অভিযানের বিষয়ে সহকারি কমিশনারের স্বাক্ষাৎকার নেন সাংবাদিকরা। স্বাক্ষাৎকার শেষে মোটরসাইকেলযোগে ফেরার পথে হবিগঞ্জের তিন টেলিভিশন সাংবাদিকের উপর হামলা চালায় বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন- এখন টিভির হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারের যুগ্ম সম্পাদক কাজল সরকার, মাই টিভির প্রতিনিধি ও দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারের সিনিয়র রিপোর্টার নিরঞ্জন গোস্বামী শুভ এবং দেশ টিভির প্রতিনিধি ও দৈনিক হবিগঞ্জের বাণীর বার্তা সম্পাদক আমীর হামজা। এ সময় হামলাকারীরা একটি ক্যামেরা ও একটি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং একটি মোবাইল ভেঙে ফেলে।
স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন। পরে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
ঘটনার পর জরুরী প্রতিবাদ সভা ডাকে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব ও টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ নাহিজ-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাস সাগর-এর পরিচালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক প্রেসক্লাব সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা রফিক, মোঃ শাবান মিয়া, মোঃ ফজলুর রহমান, চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ ও রাসেল চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, সায়েদুজ্জামান জাহির, চৌধুরী মাসুদ আলী ফরহাদ ও রাশেদ আহমদ খান, প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাকিল চৌধুরী, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল আলীম, সাধারণ সম্পাদক এসএম সুরুজ আলী, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবু সালেহ মোঃ নুরুজ্জামান চৌধুরী শওকত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরী ও শ্রীকান্ত গোপ, আশরাফুল ইসরাম কহিনুর, মুজিবু রহমান, নুরুল হক কবির, আনিছুজ্জামান চৌধুরী রতন, মোহাম্মদ নুর উদ্দিন, আব্দুর রউফ সেলিম, এম.এ আজিজ সেলিম, জাকারিয়া চৌধুরী, আজহারুল ইসলাম চৌধুরী মুরাদ, কাউছার আহমেদ, নায়েব হোমাইন, আখলাছ আহমেদ প্রিয়, মিজান ইব্রাহীম, জুয়েল চৌধুরী, সাইফুর রহমান তারেক, সহিবুর রহমান, আব্দুল হাকিম, হোসাইন মোহাম্মদ হেলিম, অপু আহমেদ রওশন, রুবেল আহমেদ, তৌহিদ মিয়া ও শাওন খান প্রমূখ।
এ সময় নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
No comments:
Post a Comment