সমকামিতা শব্দটির তাৎপর্য এদেশে নেতিবাচক গুরুত্ব বহন করলেও পাশ্চাত্য দেশগুলোতে ভিন্নরকম গুরুত্ব বহন করে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সমকামী কিংবা একই লিঙ্গের ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অনুমতি রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সমকামী পূরুষ কিংবা নারীদের একসাথে বসবাস করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অধিকাংশই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। পাশ্চাত্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশের অন্যতম বিভাগীয় শহর খুলনায় আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই সমকামীদের সংখ্যা। খুলনা নিউ মার্কেট, হাদিস পার্ক, সাত রাস্তার মোড়, খানজাহান আলী সেতু, ৬ ও ৭ নং ঘাট, ময়ুরী আবাসিক প্রকল্প সহ বেশ কয়েকটি বিনোদনস্থানে এদের ঘনিষ্টাবস্থায় দেখা মেলে। তবে কিছু অংশ ছেলে সমকামীদের আচরনে বোঝা গেলেও অধিকাংশই নিজেদের এই গোপন বাসনা ঢেকে রাখতে পছন্দ করেন। অনুসন্ধানে জানা যায় ভিন্ন এই কামনা বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরী হওয়ায় বিকৃত মানসিকতা সৃষ্টি হয় । বর্তমানে প্রাইমারীর গন্ডি না পেরোতেই সন্তানদের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মার্টফোন। আর স্মার্টফোনের মাধ্যমে এই ট্যাবুতে জড়িয়ে পড়ছে অধিকাংশ সন্তানেরা। গোপন এই বাসনা মনে লুকিয়ে রেখে একটা সময় সমকামীর পরিচয় দেওয়াতে অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে।
খুলনার একটি বেসরকারী কলেজে পড়ুয়া ছাত্রী ও নারী ক্রিকেট খেলোয়ার একে অন্যের প্রেমিকা। দীর্ঘ ৬ বছরেরও বেশী সময় পরিচয় তাদের । তারা এই প্রতিবেদককে জানান, ভাড়া বাসা খুঁজতে গিয়ে একজন অপরজনের সাথে পরিচিত হয়। মনের মত সাশ্রয়ী ভাড়ায় একটি বাসা পাওয়ায় একসাথে বসবাস করতে শুরু করে তারা। তাদের মধ্যে একজনের চুলের স্টাইল, পোশাক-পরিচ্ছদ, হাটা-চলা ও বাচনভঙ্গি ছেলেদের মত হলেও অপরজনের সবকিছুই স্বাভাবিক। ছাত্রী জীবনের শুরুতেই ওই নারীর মাঝে লুকিয়ে থাকা উভকামিতার প্রভাব পড়ে অপর নারীর উপর। তারা জানান , দুজনের মধ্যে পুরূষসাজের নারী অনলাইনে সমকামীদের বিভিন্ন নীল ভিডিও দেখাতো। একসময়ে এসকল বিষয়ে অনাগ্রহ থাকলেও ধীরে ধীরে ঐ উভকামীতায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তবে বাংলাদেশে এর কোনো বৈধতা না থাকায় দুশ্চিন্তায় তারা। সেই সাথে পারিবারিক অস্বীকৃতি নিয়েও তারা চিন্তিত। এই উভকামীতা ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ ঘৃণিত কাজ বলে আখ্যায়িত করেন ইসলামী চিন্তাবিদ্গন। এ বিষয়ে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ’র নেতা মোঃ মাঈনুল ইসলাম আকন্দ বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ এই সমকামীতা। এটি সম্পূর্ণ হারাম, সমকামিতায় লিপ্ত থাকার কারণে কয়েকটা জাতি ধ্বংস হয়েছে। তিনি আরো বলেন, “পবিত্র কোরআনের সূরা লুত’এ সমকামিতার বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানে এই পাপকারে্যর জন্য লুত আঃ এর বংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে ।”
চিকিৎসা শাস্ত্রে, সমকামীতার কারনে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের অবাধ মেলামেশার কারনে এইচ আই ভি এইডসসহ নানাবিধ দুরারোগ্য রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তবে, সমকামীতা কি একটি মানসিক ব্যাধির বহিঃপ্রকাশ ? নাকি শরীরে টেস্টোস্টেরন (পুরুষীয় হরমোন) কম থাকার কারনে এই সমস্যা হয়? প্রতিবেদকের এই প্রশ্নোত্তরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোঃ সাইফুর রহমান বলেন “এটা সম্পূর্ণ মানসিক বিকৃতির বহিঃপ্রকাশ। হরমোনজনিত কারনে এধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আমাদের দেশে নীল ওয়েব সাইটগুলো উম্মুক্ত। এসকল নীল ভিডিও দেখে ছেলেমেয়েরা এই অপকর্মে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে”। খুলনার উঠতি বয়সী কিশোর কিশোরীরা ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে বিভিন্ন পর্ণসাইট দেখে, নিজেকে বিকৃত যৌনচাহিদার খোরাক বানিয়ে ফেলছে। ফলে প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার পূর্বে নিষিদ্ধ এই সমকামীতার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এসব কিশোর কিশোরীরা। দেশের অন্যতম গনযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খুলনার বেশ কিছু সমকামী সদস্যরা বিভিন্ন পেজ তৈরী করে তাদের কমিউনিটি গড়ে তুলছে। খুলনায় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির নাম “গে কমিউনিটি খুলনা, খুলনা গে ফ্রেন্ডশীপ, খুলনা টু বাগেরহাট গে এসোসিয়েশন। এসকল গ্রুপ কিংবা পেজের মাধ্যমে পুরো একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে কতিপয় ব্যক্তি। এই গ্রুপের একজন সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায় ,তিনি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত সময়ে পুরুষকামী হয়ে ওঠেন। বয়স ৩৫ হলেও বিয়ের প্রতি কোনোই চাহিদা নেই তার। পুরুষ দেহের মাঝে নারীমনা এই ব্যক্তি বলেন,“আমার বিপরীত লিঙ্গধারী কাওকেও পছন্দ হয় না। ২০ বছর আগে থেকেই পুরুষের প্রতি আসক্ত আমি”। তবে ভার্চুয়ালি মেয়ে উভকামীদের কোনো গ্রুপ বা পেজ না থাকলেও খুলনায় বেশকয়েকটি নারী সমকামীদের সন্ধান পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এসকল নারী উভকামীরা বিভিন্ন হোস্টেল, ছাত্রী মেস ও বাসা ভাড়া করে থাকে। সম্প্রতি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে স্নেহা নামক একজন সমকামী নারীকে স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে ধরে ফেলে। খুলনার স্থানীয় একটি নিউজপোর্টালের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি ধারণ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, যশোর থেকে আগত স্নেহা নামক একজন পুরুষবেশী নারী দীর্ঘদিন ধরে খুলনার একজন নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। বিষয়টি পরিবার না মেনে নেওয়ায়, তারা পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরিবারের লোকজন বুঝতে পেরে খুলনার এই নারীকে আটকে রাখে। দুইজনই নারী হলেও প্রেমের টানে পুরুষবেশী ওই নারী খুলনা এসে তার সমকামী প্রেমিকাকে নিয়ে যেতে চায়। পরবর্তীতে জানাজানি হলে এলাকাবাসী স্নেহাকে আটকে মারধর করে ও পরবর্তীতে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। তবে, এ ধরনের মানসিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের উপর বিশেষ নজর রাখার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন নাগরিক নেতা। খুলনার নাগরিক নেতা আইনজীবী মোঃ বাবুল হাওলাদার বলেন, সমকামীতা হ্রাসকরণে আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই। তবে, সন্তানেরা যেন পর্ণ সাইটের প্রতি আসক্ত না হয় সে দিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখা জরুরী।
https://dailyprobaha.com.bd/2023/06/20/%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%86%E0%A6%B6%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%95-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE/?fbclid=IwAR1NaQ-jwf5P9wTtE3XmEHkpseOsF_4nU3AjPPe3EY3x5uhSC9etGJbZxDs
No comments:
Post a Comment