রাজধানীর পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে অভিজাত আবাসিক এলাকায় হিজড়াদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। রাস্তাঘাট, যাত্রীবাহী বাস, বাসস্ট্যান্ড এবং দোকানপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত হিজড়াদের জোরপূর্বক চাঁদাবাজি চলছে। প্রতিটি দোকান থেকে তারা সপ্তাহে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে। বিশেষ করে কোনো বাসাবাড়িতে সন্তান হলে হিজড়ারা কীভাবে যেন খবর পায় এবং সেই বাড়িতে গিয়ে চড়াও হয়। বাসায় ঢুকতে বাধা দেয়া হলে তাদের ওপরও চড়াও হয় তৃতীয় লিঙ্গের এই জনগোষ্ঠী। বিয়েশাদি ও সন্তান হলে ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচেগেয়ে এবং বিকট শব্দে হাততালি দিয়ে একটা ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করে তারা। অত্যন্ত নিষ্ঠুরতার সঙ্গে তারা বকশিশের নামে ইচ্ছে মতো টাকাপয়সা আদায় করে। নবজাতক সন্তানের জন্য তাদের চাহিদার পরিমাণ কখনোই ৩ হাজার টাকার কম হয় না। পরিবারের আর্থিক সংগতির ওপর নির্ভর করে তাদের চাঁদার পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। হিজড়রা একসঙ্গে চিৎকার করে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। নবজাতক এবং বাড়ির বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষের সামনে তাদের এই অত্যাচারে তারা হতচকিত হয়ে যায়। মানসম্মানের ভয়ে মানুষ হিজড়াদের ‘খুশি’ করার চেষ্টা করে। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অসামাজিক কার্যকলাপ ছাড়াও নিজেদের মধ্যে মারামারিসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে এরা।
হিজড়া চিহ্নত হওয়ার পর তারা আর পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতে চায় না। তারা রাজধানীর একটি নির্দিষ্ট স্থানে বাসা ভাড়া করে একজন নেত্রীর অধীনে অর্থ সংগ্রহ করতে থাকে। এই অর্থের একটা অংশ র্সদারণী বা নেত্রীর কাছে তাদের তুলে দিতে হয়। বাকি টাকা দিয়ে তারা খাবার ও প্রসাধনী সামগ্রী কেনে। হিজড়া হওয়ার কারণে এমনিতেই এরা সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পাচ্ছে। সরকারও তাদের ব্যাপারে সংবেদনশীল। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসিত করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তারা তাতে তেমন একটা সাড়া দেয় না। কেননা ঘুরেফিরে চাঁদাবাজি করে জীবনযাপন করা তাদের জন্য অনেকটাই আনন্দজনক। নিয়ন্ত্রিত জীবন তাদের পছন্দ নয়। সে কারণে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হলেও তারা তাতে তেমন একটা সাড়া দেয় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হিজড়াদের নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামায় না বলে হিজড়াদের অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হিজড়াদের টাকা তোলা নতুন কিছু নয়। আগে মানুষ যা দিত, তা নিয়েই খুশি থাকত হিজড়ারা। কিন্তু এখন তাদের আচরণ বদলে গেছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট যেখানে-সেখানে টাকার জন্য মানুষকে নাজেহাল করছে তারা। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়াও বেশ কঠিন। অনেক সময় অনুনয় বিনয় করে ছাড় পাওয়া গেলেও মাঝেমধ্যেই ভয়ংকর হয়ে ওঠে হিজড়ারা। প্রতিবাদ করলে শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত হতে হয় তাদের হাতে। অশালীন ভাষায় গালি দেয়া এদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। অনেক সময় স্ত্রী-সন্তানদের সামনে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে চাঁদা নেয় হিজড়ারা। পুলিশের সামনেই এরা চাঁদাবাজি ও সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করে। ২০১৩ সালে এদের তৃতীয় লিঙ্গের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তখন থেকেই এদের দায়-দায়িত্বের বিষয়টি এসেছে। এখন প্রশাসনের উচিত চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো অপরাধ করলে আইনের আওয়ায় আনা।
হিজড়াদের বাড়াবাড়ি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনের। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, দেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। বাস্তবে এ সংখ্যা চার গুণেরও বেশি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীতে বাসে যারা যাতায়ত করেন তাদের প্রতিদিনই হিজড়াদের খপ্পরে পড়তে হয়। একে তো বাসে বাড়তি ভাড়া দিতে হয়, তার ওপর এদের চাঁদাবাজি। ডিএমপির কর্মকর্তারা জানান, কাউকে হয়রানি বা রাস্তায় চাঁদাবাজি করার কোনো অধিকার হিজড়াদের নেই। এদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান রয়েছে।
https://www.alokitobangladesh.com/print-edition/editorial/180920/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0?fbclid=IwAR03s3446WW8vnRRH_gbB17ibijuVWXtrJ4VQ9vBYgKdy9yqwPkgDb-vxKY
No comments:
Post a Comment