Wednesday, July 26

পল্লবীতে মাকে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে কিশোরীর আত্মহত্যা

রাজধানীর পল্লবী থানাধীন আদর্শ নগর এলাকার একটি বাড়িতে মাকে বিবস্ত্র করে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে মেয়ের আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত কিশোরীর নাম বৈশাখী (১৫)। তার মায়ের নাম লাভলী। পল্লবী থানা পুলিশের সামনেই ওই কিশোরী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানান এলাকাবাসী। পরে পুলিশ সদস্যদের আটকে রেখে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে কালশি আদর্শ নগর ১১ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।


এলাকাবাসীর দাবি, ২১ নম্বর চারতলা বাড়িটির মালিক লাভলী। তার বিরুদ্ধে দুটো মাদকের মামলা আছে। মাঝে মধ্যেই পল্লবী থানা পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে টাকা দাবি করে। গত রোববারও এক লাখ টাকা নিয়ে গেছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (গতকাল) লাভলীর বাসায় পুলিশ গিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা না দেয়ায় তাকে নির্যাতন করে। এর প্রতিবাদে বৈশাখী আত্মহত্যা করেছে।
বৈশাখীর মামা সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, বিকেল ৫টার দিকে আমার বোন লাভলীর বাসায় গিয়ে তার কাছে কোনো মাদক না পেলেও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখায় পুলিশ। মোটা অংকের টাকা দাবি করে। লাভলী ৫০ হাজার টাকা দিলেও তাকে উলঙ্গ করে নির্যাতন করে পল্লবী থানার এসআই জহির, ওহিদ, আনোয়ারসহ পুলিশের স্থানীয় সোর্সরা। এ দৃশ্য দেখে আমার ভাগনী কষ্টে পুলিশের সামনেই আত্মহত্যা করেছে।



পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার জসীমউদ্দীন মোল্লা মধ্যরাতে পল্লবী থানায় সাংবাদিকদের বলেন, পল্লবী থানার একটি দল এক মাদক ব্যবসায়ী লাভলীকে ধরতে যায়। তার ওখান থেকে কিছু গাঁজা ও ইয়াবা উদ্ধার হয়। এরপর তাকে ছাড়িয়ে রাখার জন্য তার মেয়ে ও পরিবারের লোকজন টানাহেঁচড়া করে। একটা পর্যায়ে লাভলীকে নিয়ে পুলিশ নিচে নেমে আসে। এই সময়ে তার মেয়ে দরজা আটকিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকে পুলিশকে। বাই দিস টাইম সে দরজা আটকিয়ে আত্মহত্যার অ্যাক্টিং করতে গিয়ে সে ভেতরে মারা গেছে। পরে পাবলিকে দরজা ভেঙে তাকে বের করেছে। সেই ভিডিও আছে।

তিনি জানান, লাভলীর বিরুদ্ধে সাতটি এবং বৈশাখীর বিরুদ্ধে চারটি মাদকের মামলা আছে। এরা পুরো পরিবারটিই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
জসীমউদ্দীন বলছেন, আর লাভলী কী রকম অ্যাক্টিং করতে পারে, তা সবাই দেখেছে। সে আমাদের সঙ্গে রওনা করল। পথে এসে সে অজ্ঞান হওয়ার ভান করল। তার লোকজন তখন তাকে পুলিশের গাড়িতে আনতে দেবে না, তাকে যখন অটোরিকশায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেখান থেকে সে ভেগে গেল।

পুরো ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
বৈশাখীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরাও শুনেছি যে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে এবং সেখানে এসআই জহিরের দায় আছে। জহিরকে কিন্তু নিচে আটকে রাখা হয়। সেখানে একটা গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে পুলিশ মাদক উদ্ধার করতে এসে একটা মেয়েকে গলা টিপে মেরে ফেলেছে।

আমরা গিয়ে দেখলাম, যেই রুমটা থেকে লাভলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই রুমেই বৈশাখী আত্মহত্যা করেছে। পাবলিক ওই গেট ভেঙে বৈশাখীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মাকে নিয়ে গেলে বৈশাখী আত্মহত্যা করবে বলে যে হুমকি দিচ্ছিল, ওখানকার কিছু মানুষ কিন্তু এরকম ভিডিও ধারণ করেছেন, আমাদের দেখিয়েছেনও ।

তিনি বলেন, নিচে লাভলীকে আনা হলে আমাদের এক মহিলা পুলিশসহ চারজনকে আটকে রাখা হয়। আর মেয়েটির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ বেরিয়ে এসে পুলিশকে কর্ডন করে ফেলে। তারা পুলিশের উপর ইট ছুড়েছে। আমাদের লোক আহতও হয়েছে। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে শান্ত করি। এমনকী বৈশাখীর লাশ উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে আনার সময় কিছু মানুষ লাশ নামিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে।

থানায় জানিয়েই এসআই জহির এই অভিযানে গিয়েছিলেন বলে জানান এডিসি নাজমুল। থানার ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরাও এরকম অনেক কথা শুনেছি। বিষয়টির তদন্ত হবে। কেউ যদি অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কর্তব্য পালনে কোনো ত্রুটি থাকলেও অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লাভলীকে বিবস্ত্র অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগের জবাবে এডিসি নাজমুল বলেন, একজন নারীকে পুলিশ কেন বিবস্ত্র করতে যাবে? প্রত্যেকটা ঘটনারই ফুটেজ আছে স্থানীয়দের কাছে। প্রচুর গুজব ছড়ানো হয়েছে। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।

https://mzamin.com/news.php?news=66335

No comments:

Post a Comment