নানা কীর্তিকলাপে বাইরে যেমন ছিলেন আলোচনায়, কারাগারেও তেমনি বেপরোয়া যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দিকে শারীরিক নির্যাতন করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। কারা অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে এরই মধ্যে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, নথি চুরির একটি মামলায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী রুনা লায়লাকে ১৬ জুন কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আনা হয়। কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে নেওয়ার পর রুনার দেহ তল্লাশি করে কর্তব্যরত মেট্রন তার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা পান। ওই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পাপিয়া ও তার সহযোগীরা ১৯ জুন রুনাকে নির্যাতন শুরু করেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের। একপর্যায়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রুনাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। এ নিয়ে কারাগারের ভেতরে কেস টেবিল বা সালিশ বসে। সেখানে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বন্দি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে পাপিয়ার ভয়ে সাধারণ কয়েদিরা রুনা লায়লার ওপর অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদও করতে পারেননি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীনা রুনা লায়লা বলেন, আমার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা ছিল। সেই টাকা কেড়ে নেওয়ার জন্য কারাগারের হাজতি শামীমা নূর পাপিয়াসহ তার সহযোগীরা সিসি ক্যামেরা নেই এমন স্থানে নিয়ে যায়। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা জোর করে সেই টাকা নিয়ে যায়। পরে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে অমানবিকভাবে আমাকে মারধর করে। আমাকে না মারার জন্য পাপিয়ার হাত-পায়ে ধরেছি। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি। আরও বেশি করে আমাকে মেরেছে। কারাগারের ভেতর আমাকে কোনো ধরনের চিকিৎসার সুযোগও দেওয়া হয়নি।
রুনা লায়লার ভাই আবদুল করিম বলেন, আমার বোনের কাছে টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সেই টাকা কেড়ে নেওয়ার জন্য কারাগারে দায়িত্বে থাকা মেট্রন হাবিলদার ফাতেমা বেগম, নাসিমা আক্তার, হাজতি ও কয়েদিসহ যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী কারাবন্দি পাপিয়া, সোনালী, আনন্দিকা ও নাজমা আমার বোনকে বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। এক পর্যায়ে আমার বোন রক্তবমি করে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফেরার পর আবারও তাকে পেটানো হয়।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, কারাগারে বিভিন্ন অপরাধী থাকেন, তারা বিভিন্ন সময় সেখানে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এমনই শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন এক বন্দি। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া আমরা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত রিপোর্ট পেলে যারাই দায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হবে।
কারাগারে নির্যাতনের শিকার রুনা লায়লা গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার কড়িহাতা গ্রামের আবদুল হাইয়ের মেয়ে এবং মৃত একেএম মাহমুদুল হকের স্ত্রী। তিনি শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে ঢাকার জর্জকোর্টে চাকরি করতেন।
https://www.swadeshpratidin.com/details.php?id=93032
No comments:
Post a Comment