মাদারীপুরে শিবচরে থানায় আটকে রেখে আকমান নামে এক কৃষককে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি আমলে নিয়ে একমাসের মধ্যে পিবিআই’র পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমার দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি নিখুঁতভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জুলাই রাতে একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয় মাদারীপুরের শিবচরের সরকারের চর গ্রামের কৃষক আকমান মাদবরসহ ৪ জনকে। পরে হাজতখানায় তিনজনকে রাখলেও থানার দ্বিতীয় তলায় এসআই নুর মোহাম্মদের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষক আকমানকে। এরপর চলে অমানবিক নির্যাতন।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, প্রতিবেশীর সঙ্গে জমিজমা বিরোধে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় বাদীপক্ষের যোগসাজশে তাকে থানায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। মাথা বেঞ্চের নিচে ঢুকিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আকমানের বাম হাত ভেঙে ফেলা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে প্রস্রাব করলে সেটা চাটিয়ে খাওয়ানো হয় ওই কৃষককে। এছাড়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করা হয়। এই ঘটনা কাউকে বললে হত্যার হুমকিও দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে থানা পুলিশের এসআই’র বিরুদ্ধে। পরদিন আদালতে পাঠানো হয় ভুক্তভোগীকে।
পরে রোববার (১৬ জুলাই) ন্যায্য বিচার পেতে আদালতে দ্বারস্থ হয় ভুক্তভোগী কৃষক। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক অভিজিৎ চৌধুরী মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে পিবিআই’র পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী।
নির্যাতিত আকমান মাদবর বলেন, ‘জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এভাবে নির্যাতন করবে সেটা কখনই ভাবিনি। কোনো মানুষ এভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করতে পারে না। পুলিশের এসআই নুর মোহাম্মদের বিচার না হলে অন্য পুলিশরাও এমন ঘটনা ঘটাতে সাহস পাবে। তাই, তদন্তপূর্বক ওই এসআই’র বিচার চাই।’
আকমান মাদবরের ভাই টুকু মাদবর বলেন, ‘আমার ভাইকে যেভাবে নির্যাতন করছে, তা বলার ভাষা নেই। অভিযুক্ত পুলিশের বিচার চাই।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জামাল হোসেন সময় সংবাদকে জানান, থানায় আটকে রেখে কাউকে নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। পুলিশের এসআই যে কাজ করেছেন সেটা চরম অন্যায় ও অমানবিক। এই ঘটনার বিচার অবশ্যই হওয়া দরকার। বিষয়টির বিভাগীয় তদন্ত করা প্রয়োজন।
অভিযুক্ত পুলিশের উপপরিদর্শক নুর মোহাম্মদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সবই মিথ্যা। আমি কাউকে কোনো নির্যাতন বা ভয় দেখাইনি।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম মুঠোফোনে সময় সংবাদকে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিখুঁতভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আদালত যেহেতু পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, তাই পিবিআই’র তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে সেটাকে কাজে লাগানো হবে।
প্রসঙ্গগত, ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জেলায় যোগদানের পর ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি শিবচর থানায় যোগদান করেন নুর মোহাম্মদ।
https://www.somoynews.tv/news/2023-07-16/L1HtVIY1