ঢাকার সাভারে বিভিন্ন সময় দুটি মাদ্রাসায় ৫জন শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে উঠেছে। এঘটনায় পুলিশ দুই শিক্ষকে গ্রেপ্তার করেছে। ভুক্তভোগী শিশুদের পরিবার দায়ী শিক্ষদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের বাকসাত্রা উত্তরপাড়া এলাকার ‘আজিজুল উলুম কাউন্দিয়া মডেল মাদরাসা’য় ৫জন শিশু শিক্ষার্থী ও সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহল্লার ‘আত-তাহফিজ ইন্টারন্যাসনাল মাদ্রাসা’য় এক জন শিশু শিক্ষার্থী বলাৎকারের শিকার হয়।
বলাৎকারে শিকার শিশুদের বয়স ৯ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। তারা মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র ছিল।
বুধবার বিকালে কাউন্দিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল আমিন হাওলাদার বলেন, চার শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষে এক শিক্ষার্থীর স্বজন বাদীয় হয়ে সোমবার সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ওইদিন অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ শামীম (২১) গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার শামীম নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার লাহুড়িয়া গ্রামের মো. মাসুদের ছেলে। সে আজিজুল উলুম কাউন্দিয়া মডেল মাদরাসা’র শিক্ষক ছিলেন।
নির্যাতনের শিকার শিশু শিক্ষার্থীরা জানায়, বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে মারধর ও হত্যার ভয় দেখিয়ে ঘরে ডেকে নিয়ে যৌন নির্যাতন করতেন মাদ্রাসার শিক্ষক শামীম।
মালার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল আমিন হাওলাদার বলেন, গত কয়েক মাস ধরে শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসার ভিতরে বলাৎকার করে আসছিলেন শিক্ষক শামীম। এক শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিবারের কাছে বিষয়টি খুলে বললে বলাৎকারের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
তার ধারনা আরও অনেক শিক্ষার্থী ওই মাদ্রাসায় বলাৎকারের শিকার হয়েছে কিন্তু লজ্জায় কেউ মুখ খুলছে না।
তিনি বলেন, ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে শিশুরা যে জবানবন্দি দিয়েছে তা শুনলে যে কারও শরীরের লোম দাড়িয়ে যাবে।
জোক করে এসআই আল আমিন বলেন, যে জঘন্য কাজ মাদ্রাসা শিক্ষক শামীম করেছে সৌদি আরবের আইনের মতো ওই শিক্ষকে অর্ধেক মাটিতে পুতে পাথর মেরে হত্যা করা উচিত।
তবে শিশুদের পরিবারের দাবী ওই শিক্ষকের এমন শাস্তি হওয়া উচিত যাতে আর কোন মাদ্রাসা শিক্ষক এমন জঘন্য কোন কাজ করতে সাহস না পায়।
আজিজুল উলুম কাউন্দিয়া মডেল মাদরাসার মালিক ও প্রিন্সিপাল আজিজুল হক মুঠফোনে বলেন, ওই শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করে দিয়েছি। এঘটনায় আর কোন কথা বলবো না বলেই তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছূক অনেকেই বলেন, এসব মাদ্রাসায় গোপনে অনেকেই বলাৎকারের শিকার হয় কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খোলে না।
অপরদিকে সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহল্লার ‘আত-তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা’য় এক জন শিশু শিক্ষার্থী বলাৎকারের ঘটনায় গত শুক্রবার (৪আগষ্ট) সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন শিশুটির মামা মোহাম্মদ জিয়াউল হক খান। পরে পুলিশ ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আলী হোসেনকে (২৪) গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার আলী হোসেন মৌলভীবাজার জেলার সদর থানার আথানগিরি থানার আব্দুল বশিরের পুত্র। সে সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহল্লার ‘আত-তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা’র শিক্ষক।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ৩আগষ্ট বেলা ১২টার দিকে শিশু শিক্ষার্থীকে তার বিছানা থেকে ডেকে নিয়ে শিক্ষক আলী হোসেন ভবনের পঞ্চম তলায় বাথরুমে নিয়ে গিয়ে মুখ চেপে ধরে বলাৎকার করে। ঘটনাটি কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ওই দিন রাতে শিশুটি তার পরিবারকে বিষয়টি অবহিত করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: জহুরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষক আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার (৬আগষ্ট) ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রের শেখ মুজাহিদুল ইসলামের আদালতে শিশুটিকে হাজির করলে সে বলাৎকারের লোম হর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।
এ বিষয়ে আত-তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার চেয়ারম্যান এনামুল হাসান সাদীর মুঠফোনে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর লাইনটি কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
https://dailyinqilab.com/bangladesh/news/593547
No comments:
Post a Comment