Sunday, November 12

ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার রক্ষায় আইন হচ্ছে

সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পরিবারে নেই গ্রহণযোগ্যতা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এমনকি মৃত্যুর পর সৎকারেও তাদের নিয়ে দেখা যায় জটিলতা—এমন অবস্থায় ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর জন্য অধিকার সুরক্ষা আইন হচ্ছে। ৫৩টি ধারা সংবলিত এই আইনের খসড়া তৈরি করেছে সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর, সার্বিক সহযোগিতায় আছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তাদের জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, সম্পত্তিতে অধিকার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অধিকার, এমনকি মৃত্যুর পর সৎকারের বিষয় সম্পূর্ণভাবে উল্লেখ থাকবে আইনে।


কেন এই আইন: করোনাকালে সবার শেষে টিকা পায় ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠী। কারণ, তাদের পরিচয়পত্র নেই। পাসপোর্ট, স্কুলে ভর্তিসহ সব জায়গায় পরিচয়ের স্থানে হয় নারী, নয় পুরুষ লেখার নিয়ম আছে। ট্রান্স বা রূপান্তরিত নারী বা পুরুষের কোনো জায়গা আমাদের দাপ্তরিক কাঠামোতে নেই। ফলে নানাভাবে অধিকারবঞ্চিত হয় ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠী। তাসলিমা ইয়াসমিন চৈতী একজন ট্রান্স নারী, কিন্তু তার এসএসসি সার্টিফিকেটে নাম মামুন মোল্লা। সে যেখানেই যায়, সেখানেই এটি নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নিজের নাম-পরিচয় পরিবর্তন করা একটা মহাযুদ্ধের মতো। তুমিই যে মামুন, তোমারই যে এই সার্টিফিকেট, তার প্রমাণ কী? এমন প্রশ্নে উত্তর প্রতিষ্ঠা করতে যে কত ঝক্কিঝামেলা সামলাতে হয়েছে, তা যারা জানেন না, তারা অনুধাবন করতে পারবেন না। এমন সমস্যাগুলো প্রতিনিয়তই মোকাবিলা করতে হয় ট্রান্স জনগোষ্ঠীকে—এমনটাই বলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক এম রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিবারে, শিক্ষাক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যসেবা নিতে, সম্পত্তিতে অধিকার আদায়ে আইনি কাঠামো তৈরি করার উদ্যোগ নেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তবে সমাজসেবা অধিদপ্তর জানায়, তারা একই আইনের খসড়া করছে।



কী থাকছে আইনে: প্রথমত আইনে তাদের পরিচয় নির্দিষ্ট করা হয়েছে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে। আইনটি করার সময় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা আলেচনায় এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়—হিজড়া একটি সংস্কৃতি। তারা দলবদ্ধভাবে একটি সংস্কৃতি অনুসরণ করে মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু অনেক লিঙ্গবৈচিত্র্যময় মানুষ শিক্ষিত হয়ে স্বাভাবিক পেশা গ্রহণ করতে আগ্রহী। তাই সবাইকে ‘হিজড়া’ নয়, ‘রূপান্তরিত’ নির্দিষ্ট করা হয় বলে জানান সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা পরিচালক ড. মো. মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে সরকার ট্রান্সজেন্ডারদের নাগরিক হিসেবে স্বিকৃতি দিলেও তাদের সব ক্ষেত্রে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রাকৃতিক কারণে তাদের জন্ম আর দশজন মানুষের মতো নয় বলে, তারা স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে না। খসড়ায় উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তিতে অধিকার, স্কুলে ভর্তি, মৃত্যুর পর যার যার ধর্ম অনুয়ায়ী সত্কারের বিষয়টি উল্লেখ থাকবে বলে জানান হোসেন।

অধিকারের জায়গা তৈরি: ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে সচেতন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বহু দিন ধরে একটি আইনের জন্য অপেক্ষা করছে তারা। আইন হলেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। নারী-পুরুষের বাইরে ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠী অধিকারের বিষয় একটি আইনি ভিত্তি পাবে। এই সংসদে আইন পাশের সুযোগ না থাকলেও আগামী সংসদে তা পাশ হবে এবং আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সব কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

No comments:

Post a Comment