সম্প্রতি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে মন্তব্য- ‘কেউ চাইলেও লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে না’ অথবা ‘পুরুষ পুরুষই, নারী নারীই’- বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করে। আমরা এমন সময়ে বাস করছি যখন আমেরিকার মতো উন্নত দেশের সংসদে বিতর্কের বিষয় হয়- ‘পুরুষ কি গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারে?’ এ বছরের শুরুতে জেলখানায় এক ট্রান্সজেন্ডার নারী (জন্মগত পুরুষ) প্রকৃত নারীকে (রুমমেট) ধর্ষণের ইস্যুতে স্কটল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগে (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) বাধ্য হোন। স্কুলের পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডার বা এলজিবিটি মতাদর্শ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে গত ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার লক্ষ লক্ষ (মিলিয়ন মার্চ) পিতামাতা রাস্তায় নেমে আসেন।
আসন্ন আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ট্রান্সজেন্ডার একটি বড় ইস্যু হতে যাচ্ছে। তুরষ্কের সাম্প্রতিক নির্বাচনে এলজিবিটি বড় একটি ইস্যু ছিল। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এরদোয়ান বলেন- এই বিজয় এলজিবিটি মতাদর্শের বিরুদ্ধে বিজয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ট্রাডিশনাল মূল্যবোধ রক্ষার্থে এলজিবিটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। চায়নাও একই মনোভাব পোষণ করে, এলজিবিটি গোষ্ঠীর প্রাইড মাসে রঙধনু পতাকা বহনের অপরাধে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে।
হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার শব্দের মৌলিক পার্থক্য না বুঝার করার কারণে ২০১৮ সালে পাকিস্তানে ট্রান্সজেন্ডার বিল সংসদে পাস হয়। কিন্তু জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ের সাথে মনস্ত্বাত্তিক জেন্ডার পরিচয় অন্তর্ভুক্তির কারণে সমাজে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে বিধায় কোর্ট ১৭ মে ২০২৩ আইনটি বাতিল ঘোষণা করে। সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রাখতে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো এলজিবিটির বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। এমনকি উগান্ডা পশ্চিমা ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বের ব্যাংকের ঋণ স্থগিত করার মতো অর্থনৈতিক ব্যাপারকেও উপেক্ষা করেছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোও ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শে বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়েছে। জেন্ডার আইডেন্টিটি ইস্যুতে ইতালির সরকার পরিবর্তন হয়। সম্প্রতি হ্যাংগেরি ট্রান্সজেন্ডাদের লিগালাইজেশন বন্ধ ঘোষণা করেছে।
বিশ্বের বিখ্যাত টেক বিলিনিয়ার ইলন মাস্ক ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। এই বিষয়ে তিনি মাঝে মাঝে সোস্যাল মিডিয়াতে পোস্ট দিয়ে পিতামাতাকে সচেতন রাখেন। এই বিষয়টির ভয়াবহতা অনুধাবন করাতে সম্প্রতি তিনি একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি (what is a woman) শেয়ার করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বের ১৭০ মিলিয়ন মানুষ ভিডিওটি দেখেছে।
উপরোক্ত ঘটনাগুলোয় থেকে স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা যায়, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এত বেশি সোচ্চার হতেন না। এগুলো কয়েক মাস আগের ঘটনাবলি। গত বছর পর্যন্তও প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল যখন এই মতাদর্শের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করতে চেষ্টা করেছেন (একাডেমিশিয়ান, ক্লিনিসিয়ান, রিসার্চার) তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এমনকি সন্তানের পিতা (কানাডা) এবং স্কুলের শিক্ষককেও (আয়ারল্যান্ড) গ্রেপ্তার করা হয়েছে ট্রান্সজেন্ডারদের পরিবর্তিত সম্ভোধনমূলক শব্দ (pronouns : She-এর পরিবর্তে He) ব্যবহার না করার অপরাধে!
জেন্ডার আইডেন্টিটি, ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া শব্দ নিয়ে বিভ্রান্তি :
এই শব্দগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। যেমন বিবিসি উল্লেখ করে ‘As transgender activists acknowledge, it is a complex area, which can be difficult for those less than fully versed in a vast range of terms to negotiate.’ সেক্স এবং জেন্ডার শব্দ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করলেও এই ফিল্ডের বিশেষজ্ঞ ছাড়া প্রায় সবাই গুলিয়ে ফেলেন। সমাজ বিজ্ঞানে দুটি জেন্ডার আইডেন্টিটি (নারী ও পুরুষ) হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত হলেও বর্তমান সময়ে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। জেন্ডার শব্দটি ব্যক্তির অস্তিত্ব বা পরিচয়ের প্রশ্ন। বর্তমানে ১০০টির বেশি জেন্ডার আইন্ডেনিটি রয়েছে এবং এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য গবেষণায় এই শব্দ দুটোর পরিপূর্ণ অর্থ অস্পষ্ট থাকলে তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে। এজন্য আমেরিকার National Institute of Health (NIH) এই শব্দ দুটোর পার্থক্য বুঝাতে বিশেষ উদ্যোগ নেয় এবং ছবির মাধ্যমে তা তুলে ধরে। NIH-এর সজ্ঞা মতে সেক্স হচ্ছে জন্মগত বা বায়োলজিক্যাল বিষয় যেখানে ছেলে এবং মেয়ের দৈহিক গঠন, শারীরবৃত্তীয়, জেনেটিক এবং হরমোনগত পার্থক্য রয়েছে। অপরদিকে জেন্ডার হচ্ছে সামাজিক বা মনস্ত্বাতিক পরিচয় যার সাথে বায়োলজির উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক নেই।
এলজিবিটি ( এটি হচ্ছে গুচ্ছ শব্দ যেখানে লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার অন্তর্ভুক্ত) আন্দোলন মূলধারায় এসেছিল ১৯৫৫ সালে যখন সেক্স শব্দটির প্রতিভাষা হিসেবে জেন্ডার নামক শব্দ প্রবর্তনের মাধ্যমে। এরপর থেকে সমকামিতা ইস্যুতে অনেক শব্দ যুক্ত হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত শব্দগত বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে এটা পরিচিত ছিল গে এবং লেসবিয়ান ইস্যু। বর্তমানে জেন্ডার আইডেন্টিটি ফিল্ডে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল হওয়া প্রসঙ্গে Annual Review on Law and Social Science নামক জার্নালে David Frank and Nolan Phillips উল্লেখ করেন- ‘The expansion of sexuality in society is self-reinforcing. The legitimation of each new identity endangers others. Thus, the old gay center on campus morphs into the lesbian and gay center, and then the LGB center, then the LGBT center and then the LGBTQ center, and at some point the LGBTQI center, and now even the LGBTQQIAAP center (lesbian, gay, bisexual, transgendered, queer, questioning, intersex, asexual, allies and pansexual).’
জেন্ডার আইডেন্টিটি হচ্ছে একধরনের অন্তর্নিহিত বিশ্বাস বা অনুভূতি বা মানসিক অবস্থা (‘deeply internal sense of gender or a person's innate understanding of their own gender)। এটি যদি জন্মগত লৈংগিক পরিচয়ের সাথে সামঞ্জস্য হয় তবে তাকে সিসজেন্ডার (aligned between sex and gender) বলা হয়। যদি এই মানসিক অনুভূতি জন্মগত লিঙ্গের (not aligned between sex and gender) সাথে অমিল হয় তবে তাকে ট্রান্সজেন্ডার বলা হয়। একসময় ট্রান্সজেন্ডার বলতে যারা হরমোন এবং সার্জারির আশ্রয় নিতো তাদেরকে শুধু এই শব্দ দ্বারা বুঝানো হতো। বর্তমানে ট্রান্সজেন্ডার হচ্ছে আম্রেলা বা গুচ্ছ শব্দ। এটি এলজিবিটি এবং নন-বাইনারি নামক শব্দের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কার্যত এই শব্দগুলো সমকামিতা বা হোমোসেক্সুয়ালিটির সাথে জড়িত। যে প্রক্রিয়ায় কোনো ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি (ট্রান্স ম্যান বা ট্রান্স উইমেন) বাহ্যিকভাবে নিজের আইডেন্টিটি প্রকাশ করতে পারে তাকে ট্রান্সজিশন বলা হয়। এলজিবিটি মুভমেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী প্লাটফর্ম, GLAAD (Gay & Lesbian Alliance Against Defamation) ডেফিনেশন অনুযায়ী, তিনভাবে ট্রান্সজিশন বা রূপান্তর হতে পারে-
সামাজিক রূপান্তর- নামের পরিবর্তন, নতুন সম্বোধন (pronouns, e.g they, hir), বেশভূষা পরিবর্তন, মেকাপ শুরু করা বা বাদ দেয়া (e.g nail polish), মেয়েদের অলংকার পরিধান শুরু করা বা বাদ দেয়- ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, কলিগদের শুধু জানানোর মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার হওয়া যায়।
আইনগত রূপান্তর- জন্ম সনদে সেক্স আইডেন্টিটি পরিবর্তন করে জেন্ডার আইডেন্টিটি গ্রহন, ন্যাশনাল আইডিকার্ড পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সোস্যাল সিকিউরিটি রেকর্ড, ব্যাংক একাউন্টে নাম পরিবর্তন করা
মেডিকেল রূপান্তর- অত্যন্ত ব্যয়বহুল হরমোন ট্রিটমেন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের সার্জারি করে অবয়ব পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু আমেরিকা এবং ব্রিটেনের ডাটা অনুযায়ী কমপক্ষে ৯৭% ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডারদের যৌনাঙ্গ (পেনিস বা যোনী) অক্ষত থাকে, যদিও তাদের শরীরের উপরে অংশ (মুখাবয়ব, স্তন, শারীরিক কমনীয়তা ইত্যাদি)।
হিজড়ারা ট্রান্সজেন্ডার নয়- দেশের প্রধান মিডিয়াগুলোসহ বিশ্বমিডিয়া হিজড়দের ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে প্রচার করা হয়। এমন কি এমন শিরোনামও করা হচ্ছে ‘বাংলাদেশে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার মুসলিম মাদ্রাসা’, বাংলাদেশের প্রথম রূপান্তরকামী সংবাদপাঠিকা’- মিসলিডিং বা ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। হিজড়া একটি জন্মগত জেনেটিক সমস্যা বা ডিসঅর্ডার। সম্প্রতি ভারতের হিজড়া গোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে সংগায়িত করার জন্য প্রতিবাদ জানিয়েছে (The terms ‘Transgender’ and Hijra are not the same’ says Joya Sikder)। আমেরিকার বিখ্যাত গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টও এই বিষয়টা আলোকপাত করেছে যে হিজাড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার এক নয় (Why terms like ‘transgender’ don’t work for India’s ‘third-gender’ communities)। অন্যদিকে এলজিবিটি বা ট্রান্সজেন্ডারকে কোন অসুস্থতা, ডিসওয়ার্ডার বা কোনো মানসিক সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হয় না। ট্রান্সজেন্ডার এর বাংলা অভিধানিক শব্দ হিজড়া লেখা হচ্ছে, আবার রূপান্তরকামীও বলা হচ্ছে যা মিসলিডিং।
দেশে ট্রান্সজেন্ডার সামাজিকীকরণে হবে ভয়াবহ বিপর্যয় :
ট্রান্সজেডার নিয়ে অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এতে সমস্যা কী, সবাই তো আর এক রকম হয় না। ওদের সংখ্যাই বা আর কত। তারা তো আমাদের কোনো সমস্যা করছে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই মতাদর্শ পলিসি বাস্তবায়নের ফলে বিভিন্ন সামাজিক, স্বাস্থ্য এবং আইনগত সমস্যা গত কয়েক বছরে অনুধাবন করা যাচ্ছে। এটি হাজার হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গভিত্তিক সিস্টেমকে ওলোট-পালট করে দিচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নানা বিতর্ক। এক যুগ কম সময়ের মধ্যেই শিশু-কিশোরদের মাঝে ট্রান্সজেন্ডার আইডেন্টিটি নেওয়ার হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। আমেরিকায় ২০১০ তুলনায় জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া (যারা নিজেদের ভুল দেহে আটকা পড়েছে বলে মনে করে) ইস্যুতে (এটা মানসিক সমস্যা মনে করা হয় না) ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু-কিশোরদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫০০০%, ইংল্যান্ডের ছেলেদের মধ্যে বেড়েছে ১৪৬০%, আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তা হয়েছে ৫৩৩৭%। সুইডেনে বেড়েছে ১৪০০% এবং ডেনমার্কে বেড়েছে ৬৭,০০০%। ২০২২ সালের সমীক্ষা অনুসারে আমেরিকার তরুণ প্রজন্মের (যাদের জন্ম ১৯৯৭-২০০২ সালে, এদের Z Generation বলা হয়) প্রায় ২১% এলজিবিটি আইডেন্টিটি গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে যাদের জন্ম ১৯৬৫ সালের আগের হয়েছিল তাদের মধ্যে এটা ছিল মাত্র ২%। আমেরিকার এবং ব্রিটেনের তরুণ প্রজন্মের প্রায় ৪০% নিজেদের জন্মগত লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে সন্দিহান বা বিশ্বাসী নন, অর্থাৎ নন-বাইনারি (এখনো জেন্ডার পরিচয়ে ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে)। অন্যভাবে বলা যায় তারা এলজিবিটি এই মতাদর্শে বিশ্বাসী।
১। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে তৈরি হবে মারাত্মক সামাজিক বিশৃঙ্খলা-
বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা অধিকার খসড়া আইনে ট্রান্সজেন্ডারের ডেফিনেশন গ্লোবাল এলজিবিটি মুভমেন্টের অনুকরণে গ্রহণ করা হয়েছে। আত্ম-অনুভূত পরিচয়ের (self-perceived identity) ভিত্তিতে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যা ব্যক্তির জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) লিঙ্গ পরিচয়ের বিপরীত। ট্রান্সজেন্ডার শব্দের সাথে হিজড়া বা ইন্টারসেক্স গোষ্ঠীকে যুক্ত করার ফলে অনেকের কাছে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক। প্রস্তাবিত খসড়া আইনের আউটলাইন দেখে ধারণা করা যায় এটা সাম্প্রতিক বাতিল হওয়া পাকিস্তানের ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা বিলের সাথে প্রায় হুবুহু মিল রয়েছে। বাংলাদেশের খসড়া আইন (তৃতীয় চ্যাপ্টার-অধিকার সুরক্ষা- উত্তরাধিকার) অনুসারে- ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি কতৃক অনুসৃত ধর্ম অনুসারে তাহার জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিম্নবর্নিতভাবে নির্ধারণ হইবে। যথা- ক) ট্রান্সজেন্ডার ম্যানের জন্য উত্তরাধিকারের অংশ পুরুষের অংশের অনুরূপ হইবে; খ) ট্রান্সজেন্ডার উইম্যানের জন্য উত্তরাধিকারের অংশ নারীর অংশের অনুরূপ হইবে। আমাদের সমাজে সম্পত্তি নিয়ে বেশিরভাগ হানাহানি, মারামারি, বিশৃঙ্খলা হয়। দেশের প্রচলিত উত্তরাধিকার আইন ধর্মীয় মূলনীতির আলোকে নির্ধারিত হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে প্রস্তাবিত আইনে জন্মগত কোন মেয়ে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ (প্রকৃত মেয়ে) দাবি করে পুরুষের সমান সম্পত্তি পেতে আইনত বাধা নেই। আমাদের দেশের জন্য মতো অত্যন্ত দুর্বল সামাজিক এবং আইনিব্যবস্থায় এর সুদুরপ্রসারী প্রভাব কত ভয়ংকর হতে পারে তা অনুমেয়। জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়কে উপেক্ষা করা হলে সামাজিক ভারসাম্য কার্যত ভেঙে পড়বে।
২। নারীরা চাকরির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হবে-
নারীরা বিভিন্ন কারণে সামাজিক বৈষ্যমের শিকার হয়। বৈষম্য নিরসণে নারীদের প্রমোট করতে জব সেক্টরে নির্দিষ্ট কোটা সিস্টেম রয়েছে। যেমন সরকারী প্রাইমারি শিক্ষা কার্যক্রমে শতকরা ৮০ শতাংশ নারীদের জন্য নির্ধারিত। ট্রান্সজেন্ডার নারীরা সেই পজিশনগুলোতে প্রতিযোগিতা করতে আইনি বাধা থাকার কথা নয়।
৩। ক্রীড়া-প্রতিযোগিতায়, এমনকি বিউটি কন্টেস্টেও প্রকৃত নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে-
অলিম্পিকের পরিবর্তিত নিয়মে ট্রান্সজেন্ডারদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকে ১৮২ জন ট্রান্সজেন্ডার অংশ নেয়, রিওডো জেনিরো অলিম্পিকে (২০১৬) ছিল ৫৬ এবং লন্ডন অলিম্পিকে (২০১২) অংশ নেয় ২৩ জন। নিউজিল্যান্ডের ট্রান্স মেয়ে Laurel Hubbard ভারউত্তোলনে কলেজ পর্যায়ে পুরুষ হিসেবে রেকর্ও করেছিল স্থানীয় প্রতিযোগিতায় কিন্তু ২০১২-তে সে মেয়ে হিসেবে অলিম্পিকে অংশগ্রহন করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে কয়েকটি পদক জিতে নেয় মহিলা ইভেন্টে। ক্রিকেটার ম্যাক্সিন ব্লিথিন কেন্ট কাউন্টির টিমে প্রথম ট্রান্স মহিলা হিসেবে অংশ নেয়া তার ব্যাটিং গড় ১২৪ রান। কিন্তু পুরুষ ক্রিকেটার হিসেবে ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ১৫ রান! এ বছর মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার মূল আসরে দু’জন ট্রান্সজেন্ডার নারী (বায়োলজিক্যাল পুরুষ) অংশ নিচ্ছে। এই ইভেন্টের অর্গানাইজাদের প্রশ্ন করা হলে, তারা বলেন- Trans women are women. Full stop. অর্থাৎ বায়োলজিক্যাল মেয়ে এবং ট্রান্স নারীর মধ্যে পলিসি পর্যায়ে পার্থক্য নেই। অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে সম্প্রতি বাংলাদেশেও দু’জন ট্রান্স নারী ( অর্থাৎ পুরুষ) সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে!
৪। নারীরা জেলখানায়, হোস্টেল, টয়লেটে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঝুঁকিতে পড়বে-
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ট্রান্সজেন্ডার নারী (অর্থাৎ জন্মগত পুরুষ) কোন হলে সিট পাবে? ক্যাডেট কলেজ এবং আর্মি ব্যারাকে কেউ ট্রান্সজেন্ডার ঘোষণা দিলে তার স্থান কোথায়ও হবে? তারা কোন কোন টয়লেট ব্যবহার? দিন দিন এই সমস্যাগুলো পশ্চিমা সমাজে প্রকট হয়ে উঠছে। ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে মেয়েদের টয়লেট-লকার রুম ব্যবহা্র করার প্রাইভেসি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে বিবৃত অবস্থায় পড়েছে প্রকৃত মেয়েরা। ব্রিটেনের মিনিস্ট্রি অব জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী- জেলখানায় ১৭৬ জন ট্রান্সজেন্ডার নারীর (জন্মগত পুরুষ) ৭৬ জন যৌন নির্যাতনমূলক অপরাধে জড়িত হয়। এদের ৩৬ জন ধর্ষণ (rape is defined as penetration with penis) এবং ১০ জন ধর্ষণের প্রচেষ্টার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়। এখানে যে বিষয়টা জানা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে ৯৭% (ব্রিটেন এবং আমেরিকার ডাটা) এর বেশি ট্রান্সজেন্ডার নারীতে পুরুষাঙ্গ থাকে।
৫। মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হবে-
শারীরিকভাবে রূপান্তরের (মূলত বাহ্যিক) জন্য হরমোন চিকিতসা করা হয়। European Journal of Endocrinology নামক বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্যানুসারে হরমোন চিকিৎসা নেওয়া ট্রান্সজেন্ডার নারীদের ৯৫% এর হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি। ৫ বছর মেয়াদি ২৬৭১ ট্রান্সজেন্ডার নারীর নিয়ে ডেনমার্কে স্টাডিটি পরিচালিত। অন্যদিকে ট্রান্সজেন্ডারদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেশি। পিউবার্টি ব্লকার এবং শরীরে বিভিন্ন ধরনের সার্জারির কারণে চিরস্থায়ীভাবে বন্ধাত্ববরণসহ বিকলাঙ্গ হওয়া হয়। স্বাভাবিক সেক্সুয়াল প্র্যাক্টিশে অভ্যস্ত মানুষের তুলনায় এলজিবিটি কমিউনিটিতে এইচআইভিতে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি কমপক্ষে ২৬ থেকে ৩০ গুণ বেশি। মাংকিপক্স ভাইরাসে আক্রান্তদের ৯৫% এর বেশি এলজিবিটি (সমকামী পুরুষ)-এ দেখা গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার (যেমন সিডিসির ডাটা অনুযায়ী এনাল ক্যান্সার সম্ভাবনা সমকামীদের ১৭ গুণ বেশি) হওয়ার ঝুঁকি সাধারণ জনসাধারণের তুলনায় বেশি যা বিভিন্ন গবেষণা উঠে এসেছে। আমেরিকায় সিফিলিস, গনেরিয়ার ৮৩% সমকামী কমিউনিটিতে দেখা যায়।
ট্রান্সজেন্ডার স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ হিসেবে নিজেদের মনে করলেও বা সমাজে উপস্থাপন করলেও তারা অনেক মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ মানুষের তুলনায় ১৪ গুণ বেশি আত্মহত্যা চিন্তা এবং ২২ গুণ আত্মহত্যা প্রচেষ্টা নেয়। তাছাড়া মাঝে মাদকাসাক্ত, নিজে নিজের ক্ষতি করা (self-harm), ডিপ্রেশন, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদির প্রবণতাও অনেক বেশি। এলজিবিটি কমিউনিটি তাদের এই মানসিক যাতনা জন্য দায়ী করে পরিবার এবং সমাজের অবজ্ঞা এবং অবহেলাকে। কিন্তু চরম বাস্তবতা হচ্ছে সমাজের হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত সুস্থ এবং স্বাভাবিক রীতি-নীতি, আইনকানুন আবেগবশত উপেক্ষা করলে মানসিক চাপ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ অবস্থায় ট্রান্সজেন্ডার বা এলজিবিটি সামাজিকীকরণ হলে বাংলাদেশের মতো স্বপ্ল রিসোর্স সম্বলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অতিরিক্ত বোঝা তৈরি হবে।
বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার অধিকার আইন করা হবে আত্মঘাতী :
জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে আমাদের জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ও পাসপোর্ট দেয়া হয়। এগুলো উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন, ব্যাংকের নমিনি, মালিকানা ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত। পশ্চিমা দেশগুলোতে এসব ডকুমেন্টে লিঙ্গ পরিচয় নাকি জেন্ডার আইডেন্টিটি থাকবে তা নিয়ে ব্যাপক রাজনৈতিক, সামাজিক এবং একাডেমিক বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে গভীর চিন্তা-ভাবনা এবং বিশ্লেষণ ছাড়াই ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রভাবিত হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ভোক্তভোগী হতে পারে। প্রসংগত, দেশের পাসপোর্টে লিঙ্গ পরিচয় উঠিয়ে জেন্ডার শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সরকারি ডকুমেন্টে সেক্স শব্দ উঠিয়ে ইদানীং জেন্ডার শব্দ ব্যবহার করা শুরু হয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে ‘সমকাল’-একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যা শংকিত করার মতো বিষয়। পত্রিকাটি জানায় - ‘ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের রাজনৈতিকবিষয়ক প্রথম সচিব কর স্টৌটেন বলেন, বাংলাদেশ সরকার ট্রান্সজেন্ডার এবং তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকে এগিয়ে আছে। এটা খুবই প্রশংসনীয়। নো পাসপোর্ট ভয়েস এর ট্রান্সজেন্ডার অধিকারবিষয়ক শুভেচ্ছা দূত হো চি মিন ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে।’ – এই খবরটি যদি সত্যি হয় তবে দেশে সুদূরপ্রসারী ভয়াবহ প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা খসড়া আইন পাস করা হলে ট্রান্সজেন্ডার আইডেন্টিটি স্বীকৃতি দেয়া হবে এবং এর মাধ্যমে প্রকান্তরে দেশে সমকামিতা আইনত বৈধ হতে বাধা থাকার কথা নয়।
প্রধানমন্ত্রী মার্চ ২০২৩-এ সিএনএন কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সামাজিক প্রেক্ষাপটে এলজিবিটি আইন্ডেন্টিটি স্বীকৃতি দেওয়ার বিপক্ষে বলে মন্তব্য করেন। ১৩ এপ্রিল ২০২২ সালে এই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই বিষয়ে শক্তিশালী বিবৃতি দিয়েছেন। এলজিবিটি আমাদের ইসলাম ধর্মের পরিপন্থি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যুগান্তর পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন- এলজিবিটিদের (লেসবিয়ান, সমকামী, রূপান্তরকামী) জন্য বাংলাদেশে আইন নেই এবং বাংলাদেশ তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না- এমন কথাও বলা হয়। এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা আমাদের ইসলাম ধর্মের পরিপন্থি। পৃথিবীর এমন একটা মুসলিম দেশ দেখান যারা এলজিবিটিকে অনুমোদন দেয়। যত দেশ বা সংস্থা থেকে চাপ আসুক না কেন এলজিবিটি প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বিরোধিতা করা হবে, ধর্মের সঙ্গে বিরোধিতা করা হবে। এ থেকে স্পষ্টত প্রতিয়মান হয়, ট্রান্সজেন্ডারিজম বাংলাদেশে ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। জোর করে এই মতাদর্শ আইনগতভাবে চাপানো হলে দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ উসকে দেয়া হবে।
বাংলাদেশের সাধারন মানুষ (সম্ভবত পলিসিমেকাররাও) হিজড়াকে ট্রান্সজেন্ডারের সমার্থক মনে করেন। হিজড়ারা সমাজে অত্যন্ত অবহেলিত। যে কারোর সন্তান জন্মগত ত্রুটির কারনে হিজড়া হয়ে জন্ম নিতে পারে। এদের সামাজিকীকরণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকার ইতিমধ্যে তাদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রায় দুই যুগ ধরে অবহেলিত হিজড়াদের সহানুভূতিকে পুঁজি করে ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা দেশের জন্য এক ভয়ংকর পরিনতি ডেকে নিয়ে আসবে। প্রতি ৫০০০ জনে সর্বোচ্চ একজন হিজড়া হিসেবে জন্ম নিতে পারে। সেই হিসেবে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ হাজার হিজড়া থাকতে পারে। ধর্মীয় দিক থেকেও হিজড়াদের পাশে দাঁড়ানো গুরুত্বপুর্ণ সামাজিক দায়িত্ব। ডায়াগনোস্টিক পরীক্ষার (জেনেটিক এবং বায়োকেমিকেল) মাধ্যমে লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত করে হিজড়াদের পড়ালেখা, আবাস ও কর্মসংস্থান তৈরিতে পদক্ষেপ গ্রহণ হবে যাতে তারা দেশের দক্ষ জনবল হয়ে গড়ে ওঠে। আইনের মাধ্যমে হিজড়া সম্প্রাদায়ের অধিকার নিশ্চিত হওয়া এবং হিজড়ার নামে ট্রান্সজেন্ডারিজম যেন এ দেশে প্রতিষ্ঠিত না হয় সেদিকে সচেতন হওয়া জরুরি।
মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, পিএইচডি : সহযোগী অধ্যাপক, আইইউবি; সেক্স চেঞ্জ ফিল্ডে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিংগাপুর-এ ৬ বছরব্যাপী পিএইডি গবেষণা করেছেন, দেশে ১১ বছর যাবত জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করছেন। এই আর্টিকেলের রেফারেন্সের জন্য এই গবেষকের লিখিত বই- ‘সন্তান প্রতিপালনে এ যুগের চ্যালেঞ্জ’ পড়তে পারেন।
https://www.kalbela.com/opinion/sub-editorial/39283
No comments:
Post a Comment