সুমি আক্তার ও লক্ষ্মী দাস পূজা দুই বান্ধবী। দু’জনই ফরিদপুরের ভাঙ্গা কেএম কলেজের অনার্সের প্রথমবর্ষের ছাত্রী। দুই বান্ধবী গত ৭ই জানুয়ারি ভাঙ্গা থেকে শ্রীনগরে এসে একসঙ্গে বিষপান করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমির মৃত্যু হয়। সুমির মৃত্যুর পর শ্রীনগর থানায় এসে তার পরিবার ধর্ষণ ও আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করে। পরে পুলিশি তদন্তে দুই বান্ধবীর সমকামিতার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। জানা গেছে, সুমির বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার সেরেস্তাবাদ। পূজার বাড়ি ভাঙ্গা উপজেলার সোনামুখী এলাকায়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাদের পরিচয়। সপ্তম শ্রেণিতে বন্ধুত্ব হয়।
Thursday, January 12
দুই বান্ধবীর বিষপান, একজনের মৃত্যু: নেপথ্যে সমকামিতা
নবম শ্রেণিতে পূজা লক্ষ্য করে কোনো ছেলে বন্ধুর সঙ্গে সুমি কথা বললে তার অসহ্য লাগে। তেমনি পূজার সঙ্গে একদিন কথা না বলে সুমিও থাকতে পারে না। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় দু’জনই বুঝতে পারে তারা একে অপরের সঙ্গে সমাজ স্বীকৃত নয় এমন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পূজার পোশাকে পরিবর্তন আসে।
সে মেয়েদের পোশাক ছেড়ে ছেলেদের পোশাক পড়া শুরু করে। এ নিয়ে পূজার দরিদ্র বাবা-মা বকাঝকা শুরু করে। প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পূজা নিজের নামে ২টি সিমকার্ড তুলে সুমিকে একটি মোবাইল ফোন কিনে দেয়। রাতভর তাদের প্রেমালাপ চলতে থাকে। পরিবারের কেউ টের পেয়ে যেতে পারে এই ভয়ে অনেক সময় কথা না বলে শুধু মেসেজ আদান-প্রদান চলতো গভীর রাত পর্যন্ত। এক সময় পরিবারের কাছে ধরা পড়ার পর সুমির মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়া হয়। বেশ কিছুদিন পর পূজা তার ভাই সুজনের আইডি কার্ড ব্যবহার করে আরেকটি সিমকার্ড তুলে নতুন মোবাইল কিনে দেয়। দু’জনের গলায় গলায় ভাব দেখে এলাকার অনেকেই তাদেরকে হাজব্যান্ড-ওয়াইফ বলে টিপ্পনি কাটতো। কলেজ শেষে অনেক সময় দুই বান্ধবী একসঙ্গে পড়ার প্রস্তুতি নিয়ে আলাদা কক্ষে চলে যেতো। সেখানেই তারা মাঝে মধ্যে ঘনিষ্ঠ হতো। এর সূত্র ধরে ২০২০ সালের ২৬শে মার্চ দেওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে পূজা সিদুর পরিয়ে সুমিকে বিয়ে করে। ওই বছরই ২২শে আগষ্ট থেকে তারা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক শুরু করে। অনার্সে পড়ার সময় সুমির মোবাইল ফোনের বিষয়টি পরিবার থেকে অনুমতি পায়। পূজা সুমির সঙ্গে কথা বলায় কেউ তেমন সন্দেহ করতো না। সমাজের গণ্ডি পেরিয়ে দুজন অনেকবার আলাদা হতে চেয়ে না পেরে প্রতিজ্ঞা করে বাঁচলে একসঙ্গেই বাঁচবে, মরলে একসঙ্গেই মরবো। এরমধ্যে গত ৭ই জানুয়ারি সুমির সঙ্গে তার মায়ের পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে সুমি তার মাকে ইট দিয়ে আঘাত করে। পরে পূজাকে ফোন করে তাদের বাসায় আসতে বলে। বিকালের দিকে দু’জন অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। মালিগ্রাম এসে ঘাস মারার বিষ কিনে ব্যাগে নেয়। ২০০ টাকায় ঢাকার বাসের টিকিট কিনে তাতে উঠে বসে। সন্ধ্যার আগে শ্রীনগর উপজেলার হাঁসাড়া নতুন বাসস্ট্যান্ডে নামে। সেখান থেকে পার্শ্ববর্তী আবুল হোসেনের মাছ চাষের পুকুরপাড়ে গিয়ে বসে। সেখানে সুমি একসঙ্গে বাঁচা-মরার প্রতিজ্ঞার কথা পূজাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। পরে দুজনই বিষ পান করে। বিষের যন্ত্রণায় কাতরানোর একপর্যায়ে স্থানীয়দের চোখে পড়লে তাদেরকে উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। দুজনেই বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। পরিবারের ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেয়। পরে পরিবারের লোকজন এসে তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যায়। পূজাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে। সুমিকে প্রথমে ইউনিহেলথ পরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১২ই জানুয়ারি সুমির মৃত্যু হয়।
পূজা দীর্ঘদিন আইসিইউ ইউনিটে চিকিৎসা নিয়ে ২২শে জানুয়ারি বাড়িতে ফেরে। ২৫শে জানুয়ারি সুমির ভাই এনামুল মোল্লা বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেন। শ্রীনগর থানা পুলিশ মামলাটি তদন্তে মাঠে নামে। কললিস্টের সূত্র ধরে জানতে পারে পূজার ভাই সুজনের নামে উঠানো সিম দিয়ে সুমির সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ ও টেক্সট করার বিষয়টি। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুজনকে আটক করে শ্রীনগর থানায় নিয়ে আসে। সুজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পূজাকে সন্দেহের তালিকায় আনে পুলিশ। কিন্তু অসুস্থ পূজা তখনো তেমন কথা বলতে পারে না। পুলিশ সময় নেয়, সুমি ও পূজার বাড়ি থেকে তাদের লেখা দুইটি ডায়েরি উদ্ধার করে। ডায়েরির লেখা দেখে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত হয় তারা সমকামী। পরে পূজাকে আটক করে শ্রীনগর নিয়ে এলে সুমির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে। গত ৯ই ফেব্রুয়ারি পূজা মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোসাম্মৎ রহিমা আক্তারের আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীনগর থানার ওসি (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, মামলার অগ্রগতি হয়েছে। ইতিমধ্যে এর নেপথ্যের ঘটনা চিহ্নিত হয়েছে।============================================================ Advocate Shahanur Islam | An Young, Ascendant, Dedicated Human Rights Defender, Lawyer and Blogger in Bangladesh, Fighting for Ensuring Human Rights, Rule of Law, Good Governance, Peace and Social Justice For the Victim of Torture, Extra Judicial Killing, Force Disappearance, Trafficking in Persons including Ethnic, Religious, Sexual and Social Minority People.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment