Saturday, June 17

ডিবি হেফাজতে আসামির মৃত্যু!

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) একটি মামলার এক সন্দেহভাজন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৬ জুন বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায়। ১০ জুন আদালতকে জানিয়ে তাকে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং গত শুক্রবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। ওইদিন রাতেই জাতীয় হৃদরোগ থেকে ফোনে স্বজনদের জানানো হয় তিনি মারা গেছেন। এ ব্যক্তির নাম আলাল উদ্দিন দেওয়ান (৫০)।

আলালের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, বাসা থেকে তাকে সুস্থ অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল ডিবি। তাদের নির্যাতনেই আলাল মারা গেছেন।


ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে আদালতকে অবহিত করা পর্যন্ত এই চারদিন আলাল কোথায় কী অবস্থায় ছিলেন এ বিষয়ে ডিবির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আলালের বাড়ি রাজধানীর তুরাগ থানাধীন বাউনিয়া উত্তর পাড়ায়। তার বাবার নাম নূর উদ্দিন দেওয়ান। স্ত্রী পারভীন আক্তার ও দুই সন্তান রয়েছে আলালের। তুরাগ থানায় এক হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি ছিলেন তিনি।

স্বজনদের দাবি, গত ৬ জুন জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে সুস্থ আলালকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি উত্তরা বিভাগের পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান। ডিবি আটকের পর তার ওপর নির্মম নির্যাতন করে পা ভেঙে দেয়। কিন্তু অসুস্থতার বিষয়ে আলালের পরিবারকে কিছুই জানায়নি ডিবি। স্বজনরা বলছেন, আলালের মৃত্যুর এ ঘটনায় তারা বিচারের দাবিতে আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

এ বিষয়ে শনিবার (১৭ জুন) দিনভর একপ্রকার লুকোচুরি করেছে পুলিশ। ডিবি উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আকরামুল হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি। এ ছাড়া ডিবির দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করলে তারাও রিসিভ করেননি। ফোনে ম্যাসেজ করলেও কোনো সাড়া দেননি।

ডিবি উত্তরা বিভাগের এক কর্মকর্তা দাবি করেন, ডিবি হেফাজতে আলালের মৃত্যুর অভিযোগ সত্য নয়।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, 'তুরাগ থানা এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত বাড়ির কেয়ারটেকার আলাল উদ্দিন। হত্যা করার সময় ওই নারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে পায়ে আঘাত পান আলাল। তাকে গ্রেপ্তারের পর হত্যার দায় স্বীকারও করেন।'

তিনি বলেন, ‘আলাল হত্যাকাণ্ডের সময় পায়ে যে আঘাত পান তাতে পা ফুলে যায়। তখন কোর্টের নির্দেশে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার ব্লাড প্রেশার হঠাৎ বেড়ে গেলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চার ঘণ্টা থাকার পর মৃত্যু হয় আলালের।’

আলালের ডেথ নোটে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের চিকিৎসক উম্মে হাবিবা উল্লেখ করেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটি থেকে ১০ মিনিট তিনি আলাল উদ্দিনকে পরীক্ষা করেন। এ সময় তার পালস (নাড়ির স্পন্দন) ও বিপি (রক্তচাপ) ছিল না।’ ওই হাসপাতালে নেওয়ার পর এই চিকিৎসকই আলালকে প্রথম পরীক্ষা করেছেন।

শনিবার দুপুরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ইনস্টিটিউটের একটি কক্ষে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির (আলাল উদ্দিন) লাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশ। থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা আসা-যাওয়া করছেন। তবে তাদের কেউ কিছুই বলেননি গণমাধ্যমেকে।

জানা গেছে, গত ৬ জুন রাজধানীর তুরাগ থানাধীন বাউনিয়া আদর্শপাড়ার একটি বাড়ির দোতলায় খুন করা হয় ফাতেমা আক্তার মুক্তা (৩৩) নামের এক গৃহবধূকে। ওই বাসার কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) ছিলেন আলাল উদ্দিন।
এ ঘটনায় ফাতেমার ভাই মুরাদ মিয়া তুরাগ থানায় মামলা করেন। মামলার আসামি করা হয় ফাতেমার স্বামী সাইফুল ইসলাম রানাকে। এ মামলার তদন্তে নেমে ডিবি উত্তরা বিভাগের পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান আলালকে আটক করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কেয়ারটেকার আলালই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে থানায় খবর দেন।

আলাল উদ্দিনের চাচাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত ৬ জুন মাগরিবের নামাজের পর বাসা থেকে তার ভাইকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। এরপর আর কোনো খবর জানেন না। তারা কয়েকদিন ডিবিতে দেখা করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ভেতরে ঢুকতে পারেননি। গেইট থেকে বলেছে তারা কিছু জানেন না। পরে শুক্রবার রাতে হাসপাতাল থেকে ফোন করে আলালের মৃত্যুর খবর তাদের জানানো হয়।

আলালের বড় ভাই মো. লিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘মৃত্যুর পরে জানতে পেরেছি ১০ তারিখ সকালে তাকে পঙ্গু হাসাপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ছয়দিন ছিল। হৃদরোগ হাসপাতালে নেওয়া হলে মারা যায় সে।’

আলালের মৃত্যুর পর শেরেবাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এক আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘ডিবি উত্তরা বিভাগের পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত আসামি আলাল উদ্দিন গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল) এ ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গত ১৬ জুন ভর্তি করা হয় বলে জানা যায়। এদিন সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ওই আসামি মৃত্যুবরণ করেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানাকে অবহিত করে। এ আসামির বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করা প্রয়োজন।’
https://www.deshrupantor.com/capital/2023/06/17/432998/

No comments:

Post a Comment