Wednesday, October 25

নারায়নগঞ্জে চেম্বার থেকে দুই আইনজীবীকে আটকে ক্ষোভ নিন্দা

নারায়ণগঞ্জে চেম্বার থেকে দুই আইনজীবীকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভের পাশাপাশি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র আইনজীবী বৃন্দের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সাধারণ সদস্য জয়নুল আবেদীন। সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনভাবে পেশা পরিচালনার জন্য ‘আইনজীবী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের দাবি জানান।


লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত দুই আইনজীবীকে গত ২৩ অক্টোবর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যায়। সারা রাত তাদের ডিবি হেফাজতে রেখে পরদিন দুপুরে আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ বা মামলা চলমান নেই। তাদের এভাবে নিজ পেশাগত চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এই ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। আইনজীবীরা পেশা পরিচালনায় আতঙ্ক বোধ করছেন। আমরা প্রথমেই এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে স্বাধীনভাবে পেশা পরিচালনার স্বার্থে আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি।’


তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর সব সভ্য দেশে আদালত প্রাঙ্গণ ও আইনজীবীদের চেম্বারকে বিচারপ্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আইনজীবীর চেম্বার থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের ঘটনায় পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট ওই গ্রেফতারকে অবৈধ ঘোষণা করে তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন।’




সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক এই সভাপতি ও ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আইনজীবীরা স্বাধীন পেশা পরিচালনার মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সাহায্য করেন। চেম্বার শুধুমাত্র একজন আইনজীবীরই নয়, বিচারপ্রার্থীর জন্যও নিরাপদ স্থান। সেই নিরাপদ স্থান থেকে কোনও ধরনের অভিযোগ ছাড়া দুজন আইনজীবীকে আটক করার ঘটনা আমাদের দেশে ভিন্ন মতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের যেভাবে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় হয়রানি করার জন্য গ্রেফতার করা হয়, তারই পুনরাবৃত্তি বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। এর মূল কারণ দেশে কোনও সুশাসন নেই।’


তিনি বলে আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকায় এবং তারা একই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় কাজে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। ফলে রাষ্ট্রের এই বাহিনীর সদস্যরা তাদের পেশাদারিত্ব হারিয়ে ক্ষমতাসীন দলের একজন রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করছে। তাদের এই অবৈধ কার্যক্রমের সর্বশেষ শিকার নারায়ণগঞ্জের দুজন আইনজীবী। মহান আইন পেশার সম্মান রক্ষার্থে এর বিরুদ্ধে সব আইনজীবীর প্রতিবাদ গড়ে তোলা জরুরি। একইসঙ্গে বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসাসেবে আমরা প্রত্যাশা করবো, প্রধান বিচারপতি এ ঘটনা সম্পর্কে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যাতে আইন পেশার সুমহান মর্যাদা সমুন্নত থাকে। দেশের কোনও নাগরিক যেন এভাবে পুলিশি হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার না হন।’


সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এডহক কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট মুহসিন রশিদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল, সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চাকসুর) সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন, এডহক কিমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল ও অ্যাডভোকেট ইসাহাক আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

https://www.shomoyeralo.com/details.php?id=241762

No comments:

Post a Comment