স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া হত্যা মামলায় গ্রেফতার তিন জনের মধ্যে একজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার (২৭ মার্চ) বিকালে গ্রেফতার তিন আসামিকে মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে সন্ধ্যায় দোষ স্বীকার করে তিনি জবানবন্দি দেন। বাকি দুজনের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক রহিমা আক্তার।
ওই তিন আসামি হলেন- মিল্লাদ হোসেন মুন্না (১৯), আনোয়ার হোসেন (৩৮) ও এহসান ওরফে মেঘ (তৃতীয় লিঙ্গ)। এর মধ্যে মেঘ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ওই আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জামাল উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, গতকাল রাতে ওই তিন আসামিকে গ্রেফতার করে ডিবি। আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক একজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাকি দুজনের চার দিক করে রিমান্ড দেন।
উল্লেখ্য, স্থপতি ইমতিয়াজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। গত ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি নিখোঁজ হন। এ নিয়ে ৮ মার্চ তার স্ত্রী ফাহামিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ৮ মার্চ সন্ধ্যায় সিরাজদিখানের মরিচা সেতু এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে স্থপতি ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর দিন আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি আঞ্জুমান মুফিদুলে হস্তান্তর করা হয়। ৯ মার্চ বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়।
স্থপতি ইমতিয়াজ
১০ দিন পর পরিবার জানতে পারে, ইমতিয়াজ মোহাম্মদ খুন হয়েছেন। সিরাজদিখানে যে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়েছে, তা ইমতিয়াজের। পরে আদালতের অনুমতিতে গত ২১ মার্চ মঙ্গলবার ওই লাশ উদ্ধার করে শনাক্ত করেছেন স্বজনেরা।
এদিকে, আজ এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন রশীদ জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আসামিরা সমকামী এবং তৃতীয় লিঙ্গের। তারা একটি অ্যাপে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে পূর্ব থেকে সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে রুম ডেটের কথা বলে টার্গেট করে। তাদের বিভিন্ন বাসায় ডেকে নিয়ে নানা কায়দায় ব্ল্যাকমেইল করে টাকা-পয়সাসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে আসছে।
তিনি আরও জানান, ইমতিয়াজ ওই দিন কলাবাগানের ওই বাসায় যান। পরে আলিফ নামে একজনের সঙ্গে একটি রুমে ছিলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলিফের সহযোগী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার রুমে প্রবেশ করে ভিকটিমকে মারধর শুরু করে। এরপর তার কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা ইমতিয়াজের বুকে, পিঠে আঘাতসহ প্রচণ্ড মারধর করে। এতে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসামিরা পরিকল্পনা করে সুকৌশলে বাসা থেকে তার লাশ নামিয়ে মেঘের প্রাইভেটকারে উঠিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানা এলাকার কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশে ঝোপে ফেলে দিয়ে আসে। পরে আলিফকে বাসাবো, আনোয়ারকে গ্রিন রোডে নামিয়ে দেয়। এরপর আরাফাত, মেঘ, মুন্না প্রথমে নারায়ণগঞ্জ, পরে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যায়।
No comments:
Post a Comment