Thursday, March 30

যে কারণে গ্রেফতার সাংবাদিক শামসুজ্জামান

দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তোফাজ্জল হোসেন এই আদেশ দেন।

বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় শামসুজ্জামানকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রমনা মডেল থানার পরিদর্শক আবু আনছার।

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘আসামি শামসুজ্জামান জামিনে মুক্তি পেলে তদন্তে বিঘ্ন ঘটতে পারে।’ অন্যদিকে শামসুজ্জামানের জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন তার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় শামসুজ্জামানকে বুধবার রাতে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মঙ্গলবার মধ্যরাতে সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।

মামলার বাদী সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া ঢাকার কল্যাণপুরের বাসিন্দা। যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক কিবরিয়া যুগান্তরকে বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবসে একটি সংবাদ প্রকাশের পর আমি রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করি। পরে প্রশাসন তাকে আটক করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার ভোর ৪টার দিকে তিনটি গাড়িতে প্রায় ১৫ জন শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। এর মধ্যে সাত থেকে আটজন তার বাসায় ঢোকে। কক্ষ তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্কসহ শামসুজ্জামানকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় নুরজাহান হোটেলে সেহরি খেতে যায়।

ভোর পৌনে ৫টার দিকে সিআইডি পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা আবার তার বাসায় যায়। দ্বিতীয়বার বাসায় যাওয়ার সময় আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু মণ্ডলকে দেখা গেছে। বাসায় গিয়ে তারা জব্দ মালামালের তালিকা করে। পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে আবার তারা বের হয়।

বাসা তল্লাশির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন উপস্থিত ছিলেন। বাড়ির মালিককে সিআইডি পরিচয়ধারী ব্যক্তিরা জানায়, শামসুজ্জামানের একটি প্রতিবেদনে রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

গত ২৬ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি সংবাদে একজন দিনমজুরের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে উদ্বৃত করা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’

সেই সংবাদের সঙ্গে একটি শিশুর ছবি ছিল, যে গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে স্মৃতিসৌধের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে প্রথম আলো খবরটি সংশোধন করে।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, প্রথমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম এবং ব্যবহার করা ছবির মধ্যে অসঙ্গতি থাকায় ছবিটি তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শিরোনাম সংশোধন করা হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্বেগ ও প্রতিবাদ: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও সাংবাদিক আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

বুধবার সম্পাদক পরিষদের পক্ষে সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ইতোমধ্যেই সাংবাদিকতাসহ বাক্স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও বিভিন্ন মহল থেকে আইনটি পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিয়োজন ও সংযোজনের বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ, সুপারিশ ও উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। আইনটি তৈরির সময় থেকেই সম্পাদক পরিষদ এবং সাংবাদিকরা এ আইনের বিষয়ে উদ্বেগ ও আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন।

আইনমন্ত্রী এই আইনের বিভিন্ন রকম অপব্যবহার এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি সংশোধনের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও এই আইনের মাধ্যমে সংবাদকর্মী ও মুক্ত মতপ্রকাশকারী ব্যক্তিরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

বিবৃতিতে সাংবাদিকতার স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্রুত সংশোধন ও শামসুজ্জামান শামসসহ সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং এ আইনে কেউ গ্রেফতার বা আটক থাকলে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানায় সম্পাদক পরিষদ।

এদিকে শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ। সংগঠনটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, প্রথম আলো যদি সাংবাদিকতার নীতিবিরুদ্ধ কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে, তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারে। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমেই এর নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।

সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, সাংবাদিক শামসুজ্জামান একজন মানুষের উক্তি, সত্য ঘটনা তুলে ধরেছেন। এটি করে তিনি কী অপরাধটা করেছেন, সেটা বোধগম্য নয়।

এ ঘটনায় আরও উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিপিবি, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন ও নাগরিক ঐক্য।

https://www.jugantor.com/national/660203/%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%AB%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8

No comments:

Post a Comment