বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল হওয়া সত্ত্বেও দেশ ও আগামী প্রজন্মের স্বার্থে লিখা ও বলার প্রয়জোনীয়তা এবং বিবেকের তাড়না থেকেই আজকের এই লিখা। এই বিষয়টির উপর উপর টানা গবেষণা ও পড়াশুনা করে আপনাদের সামনে সারসংক্ষেপ আকারে বাংলাদেশে হিজড়া, সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডারের ভয়ানক পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি, এই লিখাটি আগামী প্রজন্মের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে হিজড়া, সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডারকে একই মনে করে বা একই বলে প্রচার করে বিষয়টিকে সহনীয় করার উদ্দেশ্য লক্ষ্য করা যায়। তাই, লেখা শুরু করার আগে এক কথায় সংজ্ঞা দেয়া যাক। হিজড়া (Hermaphrodite/intersex) মূলত হরমোনের প্রভাবে বা অন্য কোনো কারণে ত্রুটিযুক্ত লিঙ্গ বা অনেক সময় দুইটি লিঙ্গ নিয়ে জন্মায় এবং তাদের আচার আচরণ অনেকটা ভিন্ন অর্থাৎ দেখতে পুরুষ হলেও আচরণ হয় মহিলাদের আবার দেখতে মহিলা হলেও আচরণ হয় পুরুষদের মতো।
সমকামী (Homosexual/Same sex) যৌন বা রোমান্টিকভাবে নিজের লিঙ্গের লোকেদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার গুণ বা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত মানুষই সমকামী (the quality or characteristic of being sexually or romantically attracted to people of one’s own sex), অর্থাৎ পুরুষ মানুষ অন্য পুরুষের প্রতি এবং মহিলা মানুষ অন্য মহিলা মানুষের প্রতি যৌন চাহিদা পূরণের জন্য আকৃষ্ট হয়, এক কথায় same sex বা সমলিঙ্গের সাথে যৌন কার্য সম্পাদন করে।
ট্রান্সজেন্ডার বা লিঙ্গ পরিবর্তনকারী (Transgender) ব্যক্তি এমন একজন ব্যক্তি যার লিঙ্গ পরিচয় সাধারণত তাদের জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গ থেকে আলাদা করা হয় ইচ্ছাকৃতভাবে, অর্থাৎ যিনি নিজ ইচ্ছায় তার লিঙ্গের পরিবর্তন করে থাকেন (A transgender person is someone whose gender identity differs from that typically associated with the sex they were assigned at birth)। অনেক সময় সংক্ষেপে এদেরকে ট্রান্স বলা হয়। ট্রান্সজেন্ডার বিষয়টিকে ১৯৫০ সালের পরবর্তী সময়ে জনসমক্ষে নিয়ে আসা হয়।
তবে ১৯৮০ সাল থেকে সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডারকে একত্রিত করে একটি আমব্রেলার মধ্যমে Lesbian, Gay, Bisexual, and Transgender (LGBT) উল্ল্যেখ করা শুরু হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আরেকধাপ এগিয়ে এদেরকে LGBTQ+ করা হয়েছে। আর এই Q হলো Queer বা Questioning যাদের যৌন পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে LGBTQ এর আইডেন্টিটির সংখ্যা ২৫ এর উপর।
এই সময়ে সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে অনেক দেশে অনেক আইন পাশ করা হয়, লিখা হয় স্কলারলি আর্টিকেল, বই-পুস্তক, বের করা হয় অনেক ম্যাগাজিন, গড়ে উঠে অনেক বিপনী কেন্দ্র, প্ৰতিষ্ঠিত হয় অনেক ক্লাব, সংগঠন, এসোসিয়েশন; এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘে বিল পাশ হয়। তবে বিদেশে কি হলো আর না হলো তা নিয়ে এই লিখা নয়, বরং লিখার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে হিজড়া, সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে কি হচ্ছে।
হিজড়ারা রোগাগ্রস্থ/অপূর্ণাঙ্গ শারীরিক ও মানসিক কষ্টে ভুগে। হিজড়াদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা থাকতেই পারে, তাদেরকে যদি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করা যায় তারা পরনির্ভরশীল বা সমাজের বোঝা বা সমাজে উপেক্ষিত ও ধিকৃত না হয়ে সম্পদে পরিণত হতে পারে, দেশ ও জাতির কল্যানে অবদান রাখতে পারে। তবে তারা যদি তাদের শারীরিক এই অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে এবং অতিরঞ্জনের মাধ্যমে নিজের ও দেশের কল্যাণের পরিবর্তে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও সামাজিক অনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করে তবে তা হবে অপরাধ। দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে তাদেরকেও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সম্প্রতি সময়ের দিকে তাকালে সহজেই অনুমেয় যে অনেকেই আদতে প্রকৃত হিজড়া নয় বরং হিজড়ার ছদ্মবেশ ধারণ করে চাঁদাবাজি করছে, মানুষকে অহেতুক ও জোরজবরদস্তির মাধ্যমে চাঁদা দিতে বাধ্য করছে। বেকারত্ব থেকে মুক্তির জন্য হিজড়াকে এখন তারা পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে। আর হিজড়াদের উৎপাত আপনি দেখবেন রাজধানী শহরে ও জেলা শহরে কারণ এখানে আয়-রোজগার বেশি। এইতো গত ২৭শে ডিসেম্বর ২০২৩ দিনের বেলায় মহাখালী এক স্টুডেন্টের পকেট থেকে জোরপূর্বক ৫০০০ টাকা নিয়ে গেলে, ওই স্টুডেন্ট ও তার সহপাঠীরা এক হিজড়াকে আটক করলে সে জানায় সে আসলে হিজড়া নয়। তারা ওই আটক হিজড়া এবং পুরো বিষয়টিকে কর্তব্যরত পুলিশকে অবহিত করলে, হিজড়াদের একদল লাঠিসোঠা নিয়ে এসে স্টুডেন্ট ও পুলিশের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে। আবার এইতো সেদিন হিজড়ারা এক বরযাত্রা থামিয়ে সেখানে চাঁদাবাজি করলো। এখনতো বাসের মধ্যেও হিজড়ারা চাঁদাবাজি করছে সকলের সামনে।
হিজড়া সম্প্রদায় ইতিমধ্যে অনেক সুসংঘটিত হয়েছে, গড়ে তুলেছে অনেক সংগঠন যেমন হোপ এন্ড পিস ওয়েলফেয়ার অর্গানিজশন, পদ্মকুঁড়ি হিজড়া সংঘ, শান্তিনীড় হিজড়া সংঘ, সুস্থ্য জীবন সংঘ, সচেতন হিজড়া সংঘ, হিজড়া অধিকার সংঘ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি।তারা ইতিমধ্যে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে বিভিন্নভাবে যেমন নির্বাচনে অংশগ্রহণ গ্রহণ করা। ইতিমধ্যে তাদের মধ্যে থেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দেশের মধ্যে সারা ফেলে দিয়েছে। আবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এক নারী হিজড়া।তারা ইতিমধ্যে দাবি তুলেছে সংসদে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন বরাদ্দের জন্য। সামনে আরো কি ঘটতে যাচ্ছে আল্লাহ মালুম।
বাংলাদেশে হিজড়াদের জন্মগ্রহণ ও বেড়ে উঠার ইতিহাস অনেক পুরাতন। স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকে তাদেরকে আমাদের সমাজের একটি অংশ হিসেবে দেখা যেত। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে হিজড়া সম্প্রদায় সমাজে অনেকটা নিগৃহীত হিসেবেই বেড়ে উঠছিল । তবে ২০০৬ সালের পর থেকে বিশেষ করে ২০১৩ সালে তাদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে হিজড়া সম্প্রদায় সামনের দিকে চলছে অদম্য গতিতে।ফলে আসলে হিজড়া না হয়েও হিজড়ার ভান করে সুবিধা নিতে দেখা যায় হিজড়াদেরকে। বর্তমানে বাংলাদেশের সব জেলা শহর বিশেষ করে বিপণিকেন্দ্র, ব্যস্ত রাস্তা, বাজার-ঘাট থেকে শুরু করে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে হিজড়াদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
এবার নজর দেয়া যাক বাংলাদেশে সমকামীদের উত্থান ও তাদের কার্যক্রমের দিকে। সমকামিতার ইতিহাস বহু পুরাতন এমনকি খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ বছরের পুরাতন এই নিকৃষ্ঠ ও জঘন্য কর্ম আড়ালে-আবডালে চলে আসলেও গত ১৬শ শতক থেকে সমকামিতাকে জনসম্মুখে নিয়ে আসার একটি প্রবণতা দেখা যায়। এই সময়ে বিভিন্ন দেশে সমকামিতার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আইন যেমন পাশ করা হয় ঠিক তেমনি অনেক দেশে আইন বাতিলও করা হয়। রোমান ও গ্রিক সভ্যতায় সমকামিতার অনেক ইতিহাস পাওয়া যায়। লুত (আ) এর সময়ে সমকামিতার নিকৃষ্ট পাপাচারের কথা সকলেরই জানা। লুত (আ) তার সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে সাবধান করেলন এই বলে যে “তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের আগে সারা বিশ্বে কেউ করেনি? তোমরা স্ত্রীলোকদের বাদ দিয়ে পুরুষদের দ্বারা নিজেদের যৌন ইচ্ছা নিবারণ করে নিচ্ছ। প্রকৃত পক্ষে, তোমরা হচ্ছ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়”, সূরা আরাফ-৮০-৮১।
বৃটিশ আমল ও পাকিস্তান আমলে সমকামিতার উল্ল্যেখ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সমকামিতা বা সমপ্রেমের ইতিহাস বেশিদিনের নয়। ১৯৮০এর দশকে কিছু পতিতালয়ে সমকামী পুরুষ যৌনকর্মীর কথা বাংলা সংবাদপত্রে উল্লেখিত হয়, তবে সেই সময়ে সমকামিতা শব্দ ব্যাবহার করা হতোনা বরং ‘পায়ুকাম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিলো। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে এক সমকামী পুরুষের শরীরে এইচআইভি সংক্রমণের মধ্যদিয়ে ‘সমকাম’ বা ‘সমকামী’ বিষয়টি প্রকাশ্যে জনসম্মুখে আসে। এর পর থেকে সমকামী গ্রূপ বা LGBTQ গ্রূপটি আর পেছনে ফিরে তাকায়নি।তারা আস্তে আস্তে সুসংগঠিত হতে থাকে আর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নীরবে কাজ করতে থাকে।
রেংগ্যু নামক এক কানাডীয় নাগরিক ১৯৯৯ সালে সমকামীদের জন্য প্রথম অনলাইন গ্রুপ “গে বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়ের ব্যাবধানে এই সংস্থার সদস্য সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়।আবরার ২০০২ সালে গড়ে তোলে “টিন গে বাংলাদেশ” নামক একটি সংস্থা। একই বছর কাজি হক তৈরী করে “বয়েস অব বাংলাদেশ (BOB) নামক প্লাটফর্ম। তবে বর্তমান সময়ে তানভির আলম পরিচালিত গ্রুপটি বাংলাদেশী সমকামীদের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক।তারা ২০০৯ থেকে ঢাকায় এলজিবিটি সচেতনতাবর্ধক অনুষ্ঠান করে আসছে। আর এই সংগঠনটি বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী এলজিবিটি সমাজ গড়ে তুলতে চায় এবং পাশাপাশি দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাটির প্রযোজ্যতার অবসান চায়।প্রসঙ্গত দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারামতে সমকামিতা বাংলাদেশে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।সমকামিতাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ২০১০ সালের একুশে গ্রন্থমেলায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনা থেকে প্রকাশ করা হয় অভিজিৎ রায়ের লেখা “সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান” বইটি।
২০১৪ বাংলাদেশে সমকামীদেরকে গ্রহণ করা ও বৈষম্য দূর করার অভিপ্রায়ে প্রকাশিত হয় “রূপবান” পত্রিকা বা ম্যাগাজিন। এই ম্যাগাজিনের দ্বিতীয় সংখ্যায় ছাপা হয়েছিলো মুক্তমনা সম্পাদক ও সমকামিতা বইটির লেখক অভিজিৎ রায়ের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার।যেখানে তিনি অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন যে-“সমকামিতা সংক্রান্ত লেখাগুলো দ্রুতগতিতে পাঠকদের হাতে পৌঁছেও যাচ্ছে। আমি আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতির অনেক উন্নয়ন হবে। সমকামীদের লুকিয়ে ছাপিয়ে থাকতে হবে না, হবে না অযাচিত আক্রমণের ভয়ে ভীত হয়ে চলতে।” ঠিক তাই, মাত্র দুই মাসের ব্যাবধানে ১৪ এপ্রিল ঢাকায় নববর্ষের দিনে সমকামীদের এক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়, প্রকাশ্যে ও উৎসব মুখর পরিবেশে। তারা নাম দিয়েছিলো “রেইনবো র্যালি” (রঙধনু শোভাযাত্রা)। ২০১৯ সালে ডয়চে ভেলে বাংলাতে প্রকাশিত প্রতিবেদন “কেমন আছেন বাংলাদেশের সমকামীরা“ এতে উল্ল্যেখ করা হয় বাংলাদেশে ২০১৫ সাল থেকে সমকামীরা প্রকাশ্যে আসা শুরু করছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচুর সমকামী আছে যা সকলেরই জানা।
সমকামিতা এক বিকৃত যৌন চাহিদা।সমকামীরা তাদের বাসনার বশবর্তি হয়ে খুবই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক এবং সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত পন্থা ছেড়ে বিকৃত পন্থায় যৌন চাহিদা মেটাতে চায়, যা শুধু অস্বাভাবিক, ন্যাক্কারজনক, বিকৃত রুচিই না বরং সীমালঙ্ঘনের সামিল। যেখানে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে-“আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা রুম : আয়াত ২১)। আরো বলা হয়েছে-“তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাদের পোশাকস্বরূপ।” (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)। বিবাহকে হালাল ও উৎসাহিত করা হয়েছে আর অশ্লিলতাকে হারাম ও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এভাবে -“তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে স্বচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিবাহে সমর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।” (সূরা নূর : আয়াত ৩২-৩৩)।অন্যদিকে সূরা আল-আরাফ-১৭৯ বলা হয়েছে “আর আমরা তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে তা দ্বারা তারা শুনে না; তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চেয়েও বেশী নিকৃষ্ট। তারাই হচ্ছে গাফেল।”
আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকুলের সবকিছুকে মানুষের অনুগত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মহান আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা বাকারা: ২৯)। সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত এই অধিকার যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা, একইসঙ্গে নিজের স্রষ্টার আদেশ-নিষেধকে মেনে নিয়ে তাঁরই বিধান গ্রহণ করা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বৈশিষ্ট্য।কিন্তু যারা মহান স্রষ্টার অবাধ্যতা করে, তাদের বিবেক, জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি অর্থহীন হয়ে গেল। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যারা পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ কলুষিত করে, তারা মানবতার শত্রু। তাই মানুষ হয়েও তারা চতুষ্পদ প্রাণী বা তার চেয়েও নিকৃষ্ট।
মানুষ কেন চতুস্পদ জন্তুর চেয়ে নিকৃষ্ট, এর একটি অন্যতম কারণ হলো পৃথিবীর সমস্ত প্রাণিকুল, জীবজন্তু, ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার আদেশ পালন করে, এই আদেশ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলে না, আদেশ পালনে কোনো গড়িমসিও করে না। পাশাপাশি প্রতিটি প্রাণী তাদের বিপরীত লিঙ্গের সাথেই তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু একমাত্র মানুষ এমনি এক প্রাণী যারা তাদের বিপরীত লিঙ্গের সাথে যেমন জৈবিক চাহিদা পূরণকরে ঠিক তেমনি কিছু বিপথগামী, বিকৃতরুচির অধিকারীরা সমলিঙ্গের সাথেও জৈবিক চাহিদা পূরণ করে যা কোনো জন্তু জানোয়ারও করে না, আর এই সমস্ত বৈশিষ্ঠ্যের অধিকারীদেরকেই বলা হয়েছে চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট,বিভ্রান্ত ও অধম।
সমকামীরা সমকামিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেও যেন তৃপ্ত নয়, আবার আরো একধাপ এগিয়ে ট্রান্সজেন্ডার বা লিঙ্গ পরিবর্তন বা আইডেন্টিটি পরিবর্তন করতেও কুন্ঠাবোধ করছে না। আল্লাহ তায়ালা যেখানে প্রতিটি মানুষকে তার সর্বোত্তম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন, তিনি বলেন, ‘আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।’ (সুরা : ত্বিন, আয়াত-৪)।‘সে (শয়তান) বলে, আমি অবশ্যই তোমার (আল্লাহর) বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব। আমি তাদের পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করব। আমি তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা পশুর কর্ণোচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে,” সূরা নিসা ১১৮-১১৯ ।অহেতুক নিজের শরীরে বিকৃতি সাধন করা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি করার নামান্তর।আল্লাহ মানুষকে যে স্বাভাবিক দেহাবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেটাই তার জন্য উৎকৃষ্ট নিয়ামত। ইসলামী বিধি-বিধানের বাইরে গিয়ে একে পরিবর্তন-পরিবর্ধনের অধিকার কারো নেই। আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন ওই সমস্ত নারীর প্রতি, যারা অন্যের শরীরে উল্কি অঙ্কন করে, নিজ শরীরে উল্কি অঙ্কন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রু-চুল উপড়িয়ে ফেলে এবং দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। সেসব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি আনয়ন করে,” (বুখারী-৪৮৮৬)।এছাড়াও, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) নারীর বেশধারী পুরুষদের এবং পুরুষের বেশধারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন।’ (তিরমিজি-২৭৮৫)।এক বাক্যে বলতে গেলে, সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডাররা আল্লাহর আইন ও নির্দেশনাকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। তবে জেনে রাখা জরুরি যে, যারাই আল্লাহর নির্দেশনাকে অমান্য করেছে, তাদের পরিণতি শুভকর হয়নি, ইতিহাস এর সাক্ষী।
এই সুন্দরতম গঠন ভালো লাগে না, নিজেকে নিজেরমত করে পরিবর্তন করার জন্য পৃথিবীতে এই ট্রান্সজেন্ডারের আবির্ভাব।ট্রান্সজেন্ডাররা বিশ্বাস করে যে আল্লাহ তাদেরকে ভুল শারীরিক আকৃতি (wrong body) দিয়ে তৈরী করেছেন। তাই তাদের শরীরের অঙ্গ কেটে ফেলে দিয়ে, নিজের পছন্দমত তার লিঙ্গ নির্ধারণ করে এবং নতুনকরে শরীর গঠন করে। অথচ এটি সরাসরি আল্লাহর নির্দেশিত হুকুম, সৃষ্টি কৌশল, সৃষ্টি সৌন্দর্যকে শুধু চ্যালেঞ্জ করাই নয় বরং আল্লাহর সৃষ্টি কৌশলকে অস্বীকার করা। কেউ লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ থেকে মহিলা, এবং মহিলা থেকে পুরুষ হলেও কি আসলে তারা মহিলা বা পুরুষ হতে পারবে? এর উত্তর হল না। কারণ কখনো তাদের জৈবিক গঠন, শারীরিক আকার আকৃতি, শারীরিক স্কেলেটন, হার, অস্থি-মজ্জা, হরমোন, ক্রোমোজোম, শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য, বুদ্ধি, আকৃতি, দেহের গঠন, ইত্যাদি পরিবর্তন কখনো সম্ভব নয়। বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন আসলেও কখনো কি ডি এন এ র এক্স ক্রোমোজোম ওয়াই আর ওয়াই এক্স হবে? বা করেত পারবে?
১৯৫০ সালের আগেও পৃথিবীর মানুষ এই ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে ছিলো অজ্ঞাত। ১৯৪৪ সালে সর্ব প্রথম ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র মাইকেল ডিলন তার জেন্ডার পরিবর্তনের যাত্রা শুরু করে এবং এর প্লাষ্টিক সার্জন হ্যারল্ড জিল্লিস ডিলনের অপারেশন করে পৃথিবীর সামনে এক বিকৃত মানসিকতার জন্ম দেয়। গত বছরের গোড়ার দিকে আপনারা দেখেছেন যে এক যুবক কানাডার আদালতে তার পিতামাতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এই মর্মে যে তার পিতামাতা তাকে তার লিঙ্গ পরিবর্তন করতে দিচ্ছেনা। দীর্ঘ যুক্তি-তর্ক ও শুনানির পরে পরিশেষে আদালত যুবকের পক্ষে অর্থাৎ তাকে লিঙ্গ পরিবর্তনের পক্ষেই রায় দেয়। টেক্সাসে এক মা তার ছেলেকে (পিতার অমতে) মেয়ে বানানোর জন্য মামলা করে এবং আদালত মায়ের পক্ষেই রায় দেয়। পৃথিবীতে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে বিশদ আলোচনা, পক্ষে-বিপক্ষে মতামত বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে এই বিষয়টি হট কেকের মত। ১৯৬৯ সালে নিউ ইয়র্কে স্টোন ওয়াল রায়োটের মধ্যদিয়ে GLAAD Advocacy Group, LGBTQ Advocacy Group, LGBT Movement, Gay Movement, LGBT Rights, Gay Rights ইত্যাদি LGBTQ অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তার ঝোড়ো বাতাস বাংলাদেশেও বইতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপি ট্রান্সজেন্ডারের বিপরীতেও অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও ব্যাবসায়ীরা অবস্থান নিয়েছেন, এই কাতারে রয়েছে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি শুনাক তার পূর্বসূরি মার্গারেট থেচার ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পার্লামেন্টে জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন। এরদোগান, উগান্ডার প্রেসিডেন্ট, কাতার, মালয়েশিয়া, চায়না, রাশিয়া ইত্যাদি এমনকি বিসনেস ম্যাগনেট ইলন মাস্কও LGBTQ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তবে বাংলাদেশ সরকারকে LGBTQ মেনে নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি গোষ্ঠী সুকৌশলে কাজ করে যাচ্ছে। এই গত ডিসমেবের মাসে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে এক ট্রান্সজেন্ডার নারী (হোচিমিন ইসলাম) কে নিয়ে প্রোগ্র্যাম করতে গিয়ে লঙ্কা কান্ড ঘটে গেলো।বৈশাখী টিভিতে খবর পাঠ করছেন তাসনুভা আনান শিশির নাম এক ট্রান্সজেন্ডার। আরেক ট্রান্সজেন্ডার শোভা চৌধুরী ইতিমধ্যে ‘শ্রাবণ সন্ধ্যা’ প্রকাশ করেছেন। প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করছেন সঞ্জীবনী সুধা, এমবিএ করছেন অঙ্কিতা ইসলাম। ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হয়েছেন আরেক ট্রান্সজেন্ডার শিশির বিন্দু। দেশের আনাচে কানাচে আরও অনেক ট্রান্সজেন্ডার নর-নারী রয়েছে যা এখনো আমাদের লোক চক্ষুর অন্তরালে।
বাংলাদেশে LGBTQ প্রচার ও প্রসার করার জন্য ইতমধ্যে ট্রান্সজেন্ডাররা SAYAN (Amplifying Voices of South Asian LGBT Millennial Community), আন্তর্জাতিক এনজিও ILGA (International Lesbian Gay Association), GLAAD, LGBT Rights Foundation ইত্যাদি সংগঠন যারা LGBTQ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছে, এর অন্তভুক্ত হয়েছে।UN, UNESCO, EU ও Commonwealth এর অর্থ সহায়তায় ট্রান্সজেন্ডাররা বাংলাদেশে শোভাযাত্রা বের করছে এবং জনসচেতনা গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যে আড্ডা-১২, বন্ধু ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ নামক বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলে ট্রান্সজেন্ডার প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে সফলতার আলো দেখা শুরু করছে যেমন- বাংলাদেশে এখন থেকে যেকোনো আবেদন পত্রে তাদের লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য একটি অপশন রাখা হচ্ছে যা আগে কখনো ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সজেন্ডার কোটা চালু হয়েছে।ঢাকা মেডিকেলে ইতিমধ্যে ট্রান্সজেন্ডার ইউনিট খোলা হয়েছে।ট্রান্সজেন্ডার অধিকার সুরক্ষা আইন-২০২৩ এই বছর পাশ হতে যাচ্ছে। স্কুলের পাঠ্য পুস্তকে সহনীয় মাত্রায় বিষয়াটি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
আপনারা যদি মার্কিন লেখক মার্শাল ক্রিক (Marshall Krik) এর লেখা বই “After the Ball” How America will conquer its fear & hatred of Gays in the 90s দেখেন, সেখানে লেখক ৬টি বিষয়ের অবতারণা করেছেন কিভাবে যেকোন দেশে LGBTQকে প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই বইটিকে LGBTQ’র ব্লুএপ্ৰিন্ট বলা হয়ে থাকে। আমরা সংক্ষেপে এই ৬টি পয়েন্ট আলোচনা করে দেখবো বাংলাদেশে কিভাবে LGBTQ প্রতিষ্ঠার কাজকর্ম চলছে।
১. LGBTQ বিষয়টি নিয়ে সংসম্মুখে বেশি বেশি কথা বলে বিষয়টিকে সহনীয় করে তোলা। যেমন বাংলাদেশে ইতমিধ্যে ছোট ছোট নাটিকা তৈরি হচ্ছে, বিভিন্ন আবেদনপত্র (পাসপোর্ট, স্কুল, কলেজে) ইত্যাদিতে ট্রান্সজেন্ডারের একটি অপশন রাখা হচ্ছে, পাঠ্য পুস্তকেও বিষয়টি এসেছে ভিন্ন নামে।
২. LGBTQ তথা হিজড়া, সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডারদেরকে সমাজের অসহায় হিসেবে চিত্রায়িত করা। যেমন-হোচিমিনকে অসহায় হিসেবে তুলে ধরা হলো যে সে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম করতে পারলোনা।সে সংখ্যা লঘু। তাছাড়া তাদেরকে সমাজের সুবিধে বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া হিসাবে তুলে ধরা হয়।
৩. পাশাপাশি তাদেরকে হিরো, সুপেরিয়র, ফাইটার, হিসেবে দেখানো হয়। আপনি যদি খেয়াল করেন দেখবেন প্রতিটি হিজড়া, সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডারের ক্ষেত্রেই দেখবেন তারা পরিবার, সমাজ, ধর্ম, কৃষ্টি-কালচারের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধকরে তার সমাজের ট্যাবুকে জয় করেছে। তার বোনে গেছেন অধিকার প্রতিষ্ঠাকারী, শ্রদ্ধাশীল, ও সমাজের হিতাকাঙ্খী এবং সমাজের জন্য পরোপকারী।
৪. LGBTQ সংবাদগুলোকে মিডিয়াতে গুরুত্বের সাথে প্রচার করা। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে প্রথমআলো, সমকাল, বৈশাখী টিভি, ৭১টিভি, আরটিভি, সময় টিভি, ও অনলাইন মিডিয়াতে প্রচুর লেখালিখি করে মানুষের সামনে বিষয়টিকে সহনীয় করে তোলা হচ্ছে। তাদের সাক্ষাৎকার টিভি ও পত্রপত্রিকায় বেশি করে ছাপানো। মুন্নি সাহা সম্প্রতি হোচিমিনের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। অরে আগেও তাসনুভা, শিশির বিন্দুর সাক্ষাৎকার বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে। অভিজিৎ রায়ের সাক্ষাৎকার মুক্তমনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
৫.আর যারা LGBTQ এর বিরুদ্ধাচারণ করবে তাদেরকে সমাজের চোখে বিপথগামী, পশ্চাদপদ, বোকা, মৌলবাদী, ধর্মান্ধ বানানোর চেষ্টা করা। আর একারণেই অনেকেই LGBTQর মতো মারাত্মক ও ভয়ংকর বিষয়ে কথা বলতে চায় না। অনেক সময়ে LGBTQ ক্যানভাসারের কাছে এ তাদের খোঁড়া যুক্তির কাছে ভয়ে সচেতন লোক মুখবুজে থাকে। তারা ছাড়া আর সবাই তো কম বোঝা মানুষ।
৬. LGBTQর কেম্পাইনারদেরকে দেয়া হবে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও পুরুস্কার। যেমন- সরকারি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে খুব সহজেই ট্রান্সজেন্ডার জারা রহমানকে থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছে ইত্যাদি।
বাংলাদেশে হিজড়া, সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডারদের অবস্থার দিকে তাকালে দেখা যাবে যে তারা যেন ঠিক ঠিক মার্শাল ক্রিকের পয়েন্টগুলোকে সামনে রেখেই অগ্রসর হচ্ছে এবং আমাদের সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষাখাত, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা, কর্মজীবী, তরুণ-যুবককে লক্ষ্যকরে LGBTQ কাজ করে যাচ্ছে আর তাদের কাজকে সহজতর করার জন্য কিছু কিছু ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ইতমধ্যে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি ও বৈদেশিক সহায়তার আওতায় সর্বত্র সমকামী নারী, সমকামী পুরুষ, উভকামী ও ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের মানবাধিকার উৎসাহিতকরণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এই মর্মে একটি প্রেসিডেন্টের স্মারক গৃহীত হয় ২০১১ সালে। এই স্মারকের অনুচ্ছেদ সমূহকে বাস্তবায়ন করার জন্য বিদেশী মিশন ও এম্বাসিগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন এম্বেসিও এই নির্দেশ পালন করছে। এই স্মারকের উদ্দেশ্য পূরণে বৈদেশিক ত্রাণ, সহায়তা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, ট্রেজারি, ডিফেন্স, জাস্টিস, এগ্রিকালচার, কমার্স, লেবার, হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসেস, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএসএআইডি, ডিএফসি, মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অফ দি ইউনাইটেড স্টেটস, অফিস অফ দি ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত সম্ভাব্য অনুরূপ সংস্থা, সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছে।
সংক্ষেপে হিজড়া, সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডারের, LGBTQর ক্ষতিকর প্রভাবগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। তিন ধরণের যেমন শারীরিক, মানসিক, ও সামাজিক ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।আন্তর্জাতিক বিশেজ্ঞ মহল মনে করে করেন LGBTQ কারণে প্রধানত যেসকল সম্যসা তৈরী হয় তা এক কথায়-এইচআইভি রোগ ব্যাধি, বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার, মাদক দ্রব্যের ব্যাবহার, মানসিক সমস্যা, হতাশা, স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, এঞ্জাইটি, আত্মহত্যা প্রবণতা, হৃদরোগ, সিফিলিস, হেপাটাইটিস, গনোরিয়া, হরমোন সংক্রান্ত রোগব্যাধি ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের অপরাধ প্রবণতা, সমাজে উশৃংখলা, ব্যাভিচার, অশ্লিলতা, বেহায়াপনা ও অবৈধ যৌনচার বাড়বে, যুব সমাজ বিপথগামী হবে, পাশাপাশি বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি ভেঙে পড়বে, পরিবার ভেঙে যাবে, জনসংখ্যা কমে যাবে, সামাজিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিবে, বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়বে, অশ্লীল সিনেমা প্রচার-প্রসার হবে, ধর্ম থেকে দূরে সরে যাবে, ও নৈতিক অধঃপতন বৃদ্ধি পাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এককথায় LGBTQ ধর্ম, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতার উপর মারাত্মক আঘাত।
ইসলামসহ অন্যান্য বৃহৎ ধর্ম যেমন হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদি ধর্মতে LGBTQ কে সমর্থন করে না। যারা এই ইতিহাস ধিকৃত বিষয়কে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, এই ধর্মমত তাদেরকে তারা অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে। এই সমস্ত ধর্মের অবস্থান হিজড়া, সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডারের বিপরীতে, কোনো অবস্থাতেই এগুলোকে সহায়তা করে না। সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডাররা একটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েই ছাড়বে, ইতিহাস এর স্বাক্ষী। একটি জাতিকে আল্লাহ তায়ালা গজব দিয়ে দুনিয়া থেকে সমূলে উৎপাটন করেছিলো, তাদের কথা কোরআনে উল্ল্যেখ করে আমাদেরকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। দুর্ভাগ্য আমরা অল্প সংখ্যকই উপদেশ গ্রহণ করে থাকি। আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার-আচরণ, কৃষ্টি কালচার, আমাদের পরিবার সভ্যতা, ঐতিহ্য, রক্ষা করতে হবে এবং পরিষ্কার ভাষায় এই সমস্যাটিকে তুলে ধরতে হবে সবার সামনে।
বাংলাদেশ থেকে সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডারকে এখনই রোধ করা বা গণ সচেতনতা এখনই গড়ে তুলতে হবে, আর তা না হলে অনেক বেশি দেরি হয়ে যাবে। তাই এদেরকে রোধ করার জন্য সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডারের বিপরীত প্রতিটি ধর্মেরবানীকে জনসম্মুখে তুলে ধরা, ওয়ায়েজিন, ধর্মীয় বক্তা, মসজিদের ইমাম, গির্জার পুরোহিত, পাদ্রী, মন্দিরের গুরুসাধক, শিক্ষালয়ের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সমাজ সচেতন নাগরিক, থিঙ্ক ট্যাংক, লেখক, মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব, সেলিব্রেটি, মোটিভেশনাল স্পিকার, জন প্রতিনিধি সকলকেই নিয়মিত এই জঘন্য হিজড়া, সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডারের বিরুদ্ধে আলোচনা, গণসচেতনা, জনমত গড়ে তোলা, পত্র-পত্রিকায় লেখা, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করা, প্রয়োজনে লিফলেট বিতরণ করা, এবং প্রয়োজনীয় যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি পিতা-মাতা, ভাইবোন ও পরিবারের সকলকে তাদের টিনএজার, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী ও অল্প বয়স্ক সদস্যের প্রতি ও তার পিয়ার গ্রূপ এবং বন্ধু বান্ধবদের প্রতি নজর রাখা, তাদের মধ্যে এই বিজাতীয় মানসিক রোগ ও ব্যাভিচারের প্রতি তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব গড়ে তোলা।
পরিশেষে, বিজাতীয় সংকস্কৃতির ঢেউ আজ আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের উপর আঘাত এনে আমাদের সুন্দর সাজানো-গোছানো সাজটিকে ধ্বংস করার জন্য গুটিকয়েককে মাঠে নামিয়েছে, তাদেরকে এখনই থামাতে হবে। আমার যদি এতে ব্যর্থ হই তারা পরিকল্পিত এজেন্ডা সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডারকে আমাদের এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর চাপিয়ে দিবে। তাই, আমাদের দেশ, সমাজ ও পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভাজন না করে একে অপরকে সহায়তার মাধ্যমে হিজড়া, সমকামিতা, ও ট্রান্সজেন্ডারকে এখনই না বলি আর এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। পাশাপাশি সংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে আমাদের আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে সর্বোত্তম চেষ্টা করি।
No comments:
Post a Comment