Monday, January 15

বাংলাদেশে এলজিবিটি এজেন্ডার নেপথ্যে কারা?

ট্র্যান্সজেন্ডার নিয়ে কাজ করার আরও একটি সুবিধা ছিল। উপমহাদেশে দীর্ঘদিন ধরে হিজড়া নামক সম্প্রদায়ের উপস্থিতি আছে। সমাজে তাদের একধরনের পরিচিতি ও স্বীকৃতি আছে, আছে তাদের প্রতি সহানুভূতিও। ফলে হিজড়া আর ট্র্যান্সজেন্ডার শব্দদুটোকে এক সাথে ব্যবহার করে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করা তুলনামূলকভাবে সহজ।


২০১৬ সালের পর বাংলাদেশে এলজিবিটি নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বুঝতে পারে সরাসরি সমকামী অধিকারের দাবি তুলে এখানে আগানো কঠিন হবে। তারা কৌশল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। সামনে আনে ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ এবং যৌন শিক্ষাকে। এই পরিবর্তনের আরো কিছু কারণ ছিল।

২০১৫ তে অ্যামেরিকায় ‘সমকামী বিয়ে’ বৈধ হয়ে যাবার পর থেকে পশ্চিমা দাতারা ক্রমেই ট্র্যান্সজেন্ডার সংক্রান্ত কর্মকান্ডে ফান্ড দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দাতারা যৌন শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বিকৃতির স্বাভাবিকীকরণে অর্থায়নও শুরু করে। তাই দেশীয় এনজিও-গুলোও ঝুকতে শুরু করে এদিকে।


অন্যদিকে যৌন বিকৃতির সামাজিকীকরণ এবং বৈধতার জন্য শিক্ষার ভূমিকা সুদূরপ্রসারী। শিশুকিশোরদের মাথায় শুরুতেই যদি ঢুকিয়ে দেয়া যায় যে মানুষ ইচ্ছেমতো যৌন সঙ্গী বেছে নিতে পারে, ইচ্ছে মতো যৌনতায় লিপ্ত হতে পারে, নিজের পরিচয় বেছে নিতে পারে ইচ্ছে মতো – সবই ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকারের বিষয় -তাহলে এক প্রজন্মের মধ্যেই সমাজের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের অবনতি নিয়ে আসা সম্ভব।

দেশীয় এনজিও এবং এলজিবিটি সংগঠনগুলো তাই সামাজিক প্রেক্ষাপট, দাতাদের পছন্দ, কৌশল মূল্যায়নসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ এবং যৌন শিক্ষাকে সামনে রেখে এলজিবিটি মতবাদের প্রচার, প্রসার ও সামাজিকীকরণে মনোযোগী হয়। আর এজন্য তারা কাজে লাগায় হিজড়া ও তৃতীয় লিঙ্গ শব্দাগুলিকে।



হিজড়া নিয়ে অ্যাকটিভিসম:

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এনজিওগুলো যখন এইডস নিয়ে কাজ শুরু করে তখন কাজ শুরু হয় হিজড়া সম্প্রদায় নিয়েও। ২০০০ সালে কেয়ার বাংলাদেশের অর্থায়নে বাঁধন হিজড়া সঙ্ঘ নামে একটি এনজিও গড়ে ওঠে। পরের বছর হিজড়াদের নিয়ে কাজ করার জন্য সুস্থ জীবন নামে একটি এনজিও তৈরি করে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।[1] ২০১০ নাগাদ হিজড়া সম্প্রদায়ের মধ্যে এনজিওগুলোর কাজ ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। এমনকি হিজড়া এবং তাদের নিয়ে কাজ করা ‘সুশীল সমাজ’ এর মধ্যে ‘এনজিও হিজড়া’ নামে একটা নামই চালু হয়ে যায়।[2] তবে এসব এনজিও-র মাধ্যমে হিজড়া সম্প্রদায়ের লাভ কতোটুকু হয়েছে তা নিয়ে আছে মিশ্র অনুভূতি। হিজড়াদের অনেকে মনে করেন এনজিও চালানো লোকেরা প্রচুর টাকা কামিয়ে নিলেও গরীব হিজড়াদের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।[3]

২০০৭ সালে ব্র্যাকের উদ্যোগের পর হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো যৌন স্বাস্থ্যের বদলে ‘অধিকার’ এর আলাপের দিকে ঝুকে পড়ে। এ সময়টাতে উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে আইনগত স্বীকৃতি দেয়ার দাবি ওঠে। এই দাবির পেছনেও মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে পশ্চিমা দাতাগোষ্ঠী, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক এলজিবিটি নেটওয়ার্ক। তারা হিজড়াদের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। ২০০৭-এ নেপালে এবং ২০০৯-এ পাকিস্তানের পর, ২০১৩ সালে বাংলাদেশেও হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। দেশীয় এনজিও, তাদের বিদেশী ডোনার এবং এলজিবিটি আন্দোলন এই স্বীকৃতিকে দেখে নিজেদের সাফল্য হিসেবে।

২০১৫ সালে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে ঢাকায় ব্যাপক জাকজমকের সাথে হিজড়া প্রাইড নামে মিছিল আয়োজন করা হয়। প্রাইড প্যারেড বা প্রাইড মিছিলের ধারণাটা সরাসরি অ্যামেরিকান ও পশ্চিমা এলজিবিটি আন্দোলন থেকে আসা।[4] হিজড়া প্রাইডে হিজড়াদের পাশাপাশি দেখা যায় বিভিন্ন পশ্চিমা দূতাবাস আর দাতা সংস্থার কর্মকর্তাদেরও।[5]

No comments:

Post a Comment