প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, ট্রান্সজেন্ডার মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে চরম সীমালঙ্ঘন। এটি আল্লাহর সৃষ্টিতে ইচ্ছাকৃত পরিবর্তন আনা, সমলিঙ্গের মধ্যে যৌনতাসহ নানা বিকৃত যৌনতার স্বাভাবিকীকরণ এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত পরিবার ও সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিদ্রোহ। এখানে ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রসঙ্গে ইসলামের অবস্থান নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা তুলে ধরা হলো:
ট্রান্সজেন্ডার বিশ্লেষণ ও উদ্দেশ্য
ট্রান্সজেন্ডার হলো দুটি ইংরেজি শব্দ Trans ও gender-এর সংমিশ্রণ। Trans অর্থ পরিবর্তন করা এবং gender মানে লিঙ্গ।
Transgender এমন একজন পুরুষ বা নারীকে বোঝায়, যাকে আল্লাহ তাআলা একজন পূর্ণ পুরুষ বা নারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু তারা এই সৃষ্টিতে অসন্তুষ্ট। তারা আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও তাদের জন্মগত লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ থেকে নারী বা নারী থেকে পুরুষ হতে চায়। ট্রান্সজেন্ডারবাদের উত্থানের পেছনে সরাসরি সম্পর্ক খুঁজতে গেলে এ বিষয়গুলো উঠে আসে :
১. পাশ্চাত্যের নারীবাদী আন্দোলন, বিশেষ করে নারীবাদী আন্দোলনের তৃতীয় ধারা (Third wave feminism), যা নারীত্ব ও পুরুষের ধারণাকে আক্রমণ করেছে।
২. আমেরিকায় হওয়া সমকামী অধিকার আন্দোলন, যার মাধ্যমে সমকামিতাসহ নানা বিকৃত যৌনতা এবং সমকামী বিয়ে আইনি বৈধতা পেয়েছে।
৩. ষাটের দশকে আমেরিকায় ঘটা যৌন বিপ্লব, যা যৌনতার ব্যাপারে সব ধরনের মূল্যবোধ মুছে ফেলেছে।
৪. এই তিনের মিশ্রণে তৈরি হওয়া জেন্ডার আইডেন্টিটি (Gender Identity) মতবাদ।
৫. চিকিৎসাশাস্ত্র, চিকিৎসক ও ফার্মাসিউটিকাল ইন্ডাস্ট্রির একটি অংশ।
ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়ার পার্থক্য
আমাদের সমাজে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ধারণা আছে।
ট্রান্সজেন্ডারবাদের কথা শুনলে বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, এটা হয়তো হিজড়াদের অধিকার নিয়ে কোনো আন্দোলন। এটি মারাত্মক ভুল ধারণা। এই দুটি জিনিস একেবারেই আলাদা। দুই মেরুর জিনিস। মানুষ হয় সম্পূর্ণ পুরুষ অথবা নারী।
যাদের দেহ শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য তৈরি, তারা পুরুষ আর যাদের দেহ ডিম্বাণু উৎপাদনের জন্য তৈরি, তারা নারী। এটা শুধু বাহ্যিক যন্ত্রপাতির বিষয় নয়, পুরো প্রজননব্যবস্থার বিষয়। সুতরাং এখন যারা জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক এবং কিছু যৌন ত্রুটি বা জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যাকে আমরা হিজড়া বলি, ইংরেজিতে তাদের বলা হয় ইন্টারসেক্স (Intersex)। পক্ষান্তরে ট্রান্সজেন্ডাররা ইন্টারসেক্স নয়, তারা সম্পূর্ণরূপে পুরুষ বা নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করে এবং পরে লিঙ্গ পরিবর্তন করে।
মূলত বর্তমানে যারা নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার দাবি করছে তাদের বেশির ভাগই ইন্টারসেক্স নয়। তাদের কোনো ধরনের ডিএসডি (Disorders of sex development) নেই। তাদের জন্ম হয়েছে সুস্থ ও স্বাভাবিক যৌনাঙ্গ নিয়ে।
ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।’ (সুরা : ত্বিন, আয়াত : ৪)
আল্লাহ তাআলা মানুষকে যে স্বাভাবিক দেহাবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেটাই তার জন্য উৎকৃষ্ট নিয়ামত। ইসলামী বিধি-বিধানের বাইরে গিয়ে একে পরিবর্তন-পরিবর্ধনের অধিকার কারো নেই। লিঙ্গ পরিবর্তন ইসলামে জঘন্যতম হারাম ও কবিরা গুনাহ। এর সঙ্গে আপস করার কোনোই সুযোগ নেই।
পুরুষকে আল্লাহ যে পুরুষালি বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করছেন, তা সেভাবেই বজায় রাখা এবং নারীকে যে নারীত্বের বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তা-ও সেভাবে ধরে রাখাই আল্লাহর বিধান। এটা এমনই এক ব্যবস্থা, যা না হলে মানবজীবন যথাযথভাবে চলবে না। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) নারীর বেশধারী পুরুষদের এবং পুরুষের বেশধারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন’। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৫)
সব ইসলামী আইনবিদ এ বিষয়ে একমত যে ট্রান্সজেন্ডার হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতে বিকৃতিসাধন, যা সুস্পষ্ট হারাম। আবার অনেকের ভাষ্য মতে এটি কুফরি। তাফসিরে কুরতবিতে ইমাম কুরতবি (রহ.) বলেন, আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনোরূপ পরিবর্তন করা নাজায়েজ। (তাফসিরে কুরতবি : ৫/৩৯৩)
No comments:
Post a Comment