Thursday, April 6

অন্ধ হাফেজকে পুলিশ কর্মকর্তার মারধর, বিচারের দাবি

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজকে মারধরের ঘটনার বিচার দাবি করে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নির্যাতিত হাফেজ কয়েস আহমেদ। এদিকে অভিযুক্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক মিজানুল হক দায় থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি আপসে মীমাংসা করার জন্য স্থানীয় দালালদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হাফেজকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে চলেছেন তিনি। তবে হাফেজ কয়েস আহমেদের একটাই চাওয়া, বিনা অপরাধে তাকে যে পুলিশ কর্মকর্তা নির্যাতন করে মানুষের সামনে অপদস্থ করেছে তার যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। নির্যাতনের ঘটনার বিচার চেয়ে গত ৬ই ডিসেম্বর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন হাফেজ কয়েস। পরে বিষয়টি তদন্তের জন্য বাহুবল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। তবে দীর্ঘ ৪ মাসে তদন্ত রিপোর্টের ফলাফল না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন অভিযোগকারী। অভিযোগটি সরাসরি খতিয়ে দেখে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি পুলিশ সুপারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। 



Pause
Unmute


Remaining Time -14:11Close Player

অভিযোগে প্রকাশ, গত ডিসেম্বর মাসে যৌথ পরিবারে মা ও ভাইদের থাকা নিয়ে হাফেজ কয়েস আহমেদ ও তার স্ত্রী আমিনা খাতুনের মনোমালিন্য হয়। এর জের ধরে হাফেজ কয়েসের স্ত্রী লাখাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে হাফেজ কয়েসও আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে স্থানীয়দের প্রস্তাবে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধান হয়। এদিকে এই জিডি’র সূত্র ধরে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক মিজানুল হক প্রতিবন্ধী হাফেজের কাছে বারবার ফোন করে টাকা দাবি করেন। এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দিতে থাকেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ পুলিশ কর্মকর্তা গত ৫ই ডিসেম্বর বিকালে স্থানীয় কানিপুর বাজার থেকে হাফেজ কয়েসকে আটক করে জনসম্মুখে চড়-থাপ্পড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে তাকে টেনে-হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যান। সেখানেও হাফেজকে অমানবিকভাবে মারপিট করেন মিজানুল হক।



পরে তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। অনেক পীড়াপীড়ির পর ৫ হাজার টাকা দিয়ে হাফেজ কয়েসকে ছাড়িয়ে আনেন তার স্বজনরা। পরে আহত হাফেজ কয়েস হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে নির্যাতনের বিচার চেয়ে তিনি পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এদিকে অভিযোগ দায়েরের পর থেকে নড়েচড়ে বসেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুল হক। দায় থেকে বাঁচতে আপসে মীমাংসা করতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে অভিযোগ তুলে নিতে উৎকোচের চেয়েও বেশি টাকা প্রদানের প্রস্তাব দেন তিনি। এতেও রাজি না হওয়ায় দায় স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমন কাজ করবেন না বলে স্ট্যাম্পে লিখিত দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু হাফেজ এতে সন্তুষ্ট নন, তার দাবি যেভাবে তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে তার একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি। এজন্য তিনি পুলিশ সুপারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন। তিনি আশা করছেন পুলিশ সুপার অবশ্যই দোষী এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।





এ ব্যাপারে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খয়ের জানান, বিস্তারিত তদন্ত শেষে আমি রিপোর্ট পুলিশ সুপারের কাছে জমা দিয়েছি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পুলিশ সুপার পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নির্যাতনের শিকার হাফেজ কয়েস আহমেদ জানান, পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুল হক শত শত লোকজনের সামনে আমার পাঞ্জাবির কলার ধরে টেনে- হিঁচড়ে নিয়ে আসেন। জনসম্মুখে আমি একজন অন্ধ কোরআনে হাফেজকে প্রকাশ্যে চড়-থাপ্পড় ও লাথি, ঘুষি মারতে থাকেন। থানায় নিয়েও আমাকে চড়- থাপ্পড় ও শারীরিক নির্যাতন করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনার পর লজ্জায় আমি ঘর থেকে বের হতে পারিনি। আমি চাই একজন হাফেজকে যে এভাবে সমাজে অপদস্থ করেছে তার যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। আর কেউ যেন এভাবে সমাজে অপদস্থ না হয়। আর আমার বিশ্বাস, মানবিক পুলিশ সুপার একজন হাফেজকে অপদস্থকারীর বিরুদ্ধে কঠিন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

No comments:

Post a Comment