বকেয়া বেতন দাবিতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পোশাক শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছেন। এ সময় শিল্প পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ফতুল্লার অবন্তী কালার টেক্স গার্মেন্টে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শিল্প পুলিশ নারায়ণগঞ্জ ইউনিটের পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, বকেয়া বেতন দাবিতে প্রায় ২ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন অবন্তী কালার টেক্সের শ্রমিকরা। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে শ্রমকিদের সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা শান্ত হয়ে ফিরে যান।
শ্রমিকরা জানান, তাদের মার্চের বেতন-ভাতা বকেয়া। এছাড়া কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই, কোনো শ্রমিক প্রতিবাদ করলে গার্মেন্ট মালিকের ক্যাডার বাহিনী আটকে রেখে মারধর ও হুমকি ধমকি দেয়। এসব কারণে ক্ষুব্ধ ছিলেন তারা। গতকাল সকাল ৯টায় কাজে যোগ দিতে গিয়ে কারখানা বন্ধ দেখতে পান তারা। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে গেলে শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে মুন্সিগঞ্জ-ঢাকা সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তারা বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে ও টেবিলে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে রাস্তার দুই পাশে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। শিল্প পুলিশ ও ফতুল্লা থানা পুলিশ শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করলে তারা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। পরে শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য জলকামান নিয়ে গেলে উত্তেজিত শ্রমিকরা তা ভাংচুর করেন। শিল্প পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়লে শ্রমিকরা পিছু হটলেও ঢিল ছুড়তে থাকেন।
শ্রমিকদের দাবি, পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেলে ২৭-২৮ জন শ্রমিক ও পথচারী আহত হয়েছেন। পরে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ শ্রমিকদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দেন। ক্রোনি গ্রুপের রফতানিমুখী এ পোশাক কারখানাটিতে সাত হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ।
কারখানার শ্রমিক আব্দুর রউফ ও শিল্পী বেগম জানান, ৮ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত কাজ করার পর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঈদের আগে বোনাস পেলেও মার্চের বেতন বকেয়া ছিল। কারখানার মালিক ঈদের আগেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মার্চের বেতন পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দিলেও তা পাননি শ্রমিকরা।
এ ব্যাপারে ক্রোনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানি বলেন, ‘ঈদের আগে সব শ্রমিককে বোনাস দিয়েছি। কিন্তু শিপমেন্ট ঠিকমতো না হওয়ায় মার্চের বেতনটা দিতে পারিনি। বুধবারের মধ্যে বেতন পরিশোধ করে দেব।’
শিল্প পুলিশ নারায়ণগঞ্জ ইউনিটের পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। শ্রমিকদের সড়ক থেকে ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment