Wednesday, April 17

ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক ‘রূপান্তর’ নাটক ঘিরে যে নাটকীয়তা

সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে তৈরি ‘রূপান্তর’ নামের একটি নাটক ইউটিউবে প্রকাশিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে সরিয়ে নিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।


সেইসাথে, নাটকের পৃষ্ঠপোষক ওয়ালটন ইতোমধ্যে এক ফেসবুক পোস্টে দুঃখ প্রকাশ বলেছে, নাটকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাদের জানা ছিল না। যাদের সাথে নাটকের স্পন্সর করার বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল, সেই বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে তারা আইনি নোটিশও পাঠিয়েছে।


নাটকটি ইউটিউবে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শকরা ‘ওয়ালটন’ এর পণ্য বয়কটের ডাক দেয়। অনেকে অভিযোগ করেছেন, এর মাধ্যমে 'ট্রান্সজেন্ডার প্রচারণা' করা হচ্ছে। 


অপরদিকে, নাটকটি সরিয়ে নেওয়ায় অনেকে আবার সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, ট্রান্সজেন্ডার যেহেতু সমাজের একটি অংশ, সেটা তুলে ধরা হয়েছে। 


নাটকের পরিচালক বলছেন, পুরো ঘটনায় তিনি মর্মাহত। 


এই নাটকটি ঘিরে আসলে কী ঘটেছে?

ছবির উৎস, RAFAT MAJUMDAR RINKUছবির ক্যাপশান, ‘রূপান্তর’ নাটকের পোস্টার

কী ছিল ‘রূপান্তর’ নাটকে?


রূপান্তর নাটকটি ১৫ই এপ্রিল, সোমবার সন্ধ্যায় ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছিলো। কিন্তু দর্শকদের সমালোচনার মুখে পরদিন সকালে তা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান একান্ন মিডিয়া’র ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।


কিন্তু রাফাত মজুমদার রিংকু পরিচালিত ‘রূপান্তর’ নাটকটিকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিলেও নাটকের কপি এখন বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।


এখন প্রশ্ন হল, এই নাটকে কি এমন আছে যার জন্য সেটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে নিতে হল? কেনই-বা এই ইস্যুকে ঘিরে ওয়ালটনকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হল?


এই নাটকটি একজন চিত্রশিল্পীকে ঘিরে। গল্পে যার নাম সৌরভ। চৌরভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দার অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান।


নাটকে দেখানো হয়, ১৯৮৯ সালে নরসিংদীতে একটি ট্রেন দুর্ঘটনায় মোট ১৭০ জন মারা যান। সেসময় সৌরভের বয়স ছিল এক বছর। ভাগ্যক্রমে সেই দুর্ঘটনায় সৌরভ বেঁচে গেলেও তার মা মারা যান। সৌরভকে উদ্ধার করার পর তাকে শিশু সদনে পাঠানো হয়, সেখানেই বড় হন তিনি।


পরিবার-পরিজন ছাড়া বেড়ে ওঠা সৌরভ তার শিল্পকর্মের গুণে একসময় একজন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠেন। নাটকে তাকে অনেক মানুষের পোট্রেট আঁকতে দেখা যায়।


ঘটনাক্রমে তিনি এই নাটকের আরেক চরিত্র রিমঝিমেরও পোট্রেট আঁকেন। রিমঝিম সেই পোট্রেট দেখে মুগ্ধ হন এবং তার মাঝে শিল্পীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করার আগ্রহ জন্ম নেয়।


এক পর্যায়ে তিনি শিল্পী সৌরভকে খুঁজে বের করেন এবং তার সঙ্গে দেখা করেন। সৌরভের মেয়েদের মতো সাজপোশাক দেখে অবাক হয় রিমঝিম।


নাটকে দেখা যায়, সৌরভের বেশভূষায় থাকছে শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ, কপালে টিপ, গলায় পুঁতির মালা, হাতে চুড়ি, নাকে নথ, কানে দুল, চোখে গাঢ় কাজল, মাথায় পরচুল, হাতে নেইলপলিশ ইত্যাদি।

ছবির উৎস, GETTY IMAGESছবির ক্যাপশান, হিজড়াদের বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে


সৌরভের বেশভূষা তার কাছে অস্বাভাবিক লাগলেও তিনি শেষমেষ তার প্রেমে পড়েন। এক পর্যায়ে, রিমঝিমের পক্ষ থেকে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয় সৌরভের কাছে।


কিন্তু সৌরভ রিমঝিমের মাকে সরাসরি জানিয়ে দেন যে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব না। তবে রিমঝিম নাছোড়বান্দা। তিনি তার মাকে জানান যে বিয়ে করলে তিনি সৌরভকেই করবেন।


শেষে একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে জানানো হয়, সৌরভ হরমোনজনিত এক সমস্যায় আক্রান্ত।


চিকিৎসকের ভাষায়, “সৌরভ ডিজঅর্ডার অব সেক্স ডেভেলপমেন্ট (ডিএসডি)-তে আক্রান্ত। একটি শিশুর জন্মগতভাবে জেনেটিক সেক্স থাকে, আরেকটি থাকে ফেনোটাইপিক সেক্স। এই দুইয়ের মাঝে অসামাঞ্জস্য থাকলে সেক্স প্রকাশিত হয় না।”


নাটকে চিকিৎসকের ব্যখ্যা অনুযায়ী, সৌরভ 'জেনেটিক্যালি' একজন মেয়ে। শুরুতে তার মেয়েলি হরমোন বিকশিত না হলেও, পরবর্তীতে সেটি বিকশিত হতে থাকে।


অর্থাৎ, সৌরভ দেখতে পুরুষের মতো হলেও তিনি একজন নারী।


‘রূপান্তর’ নাটকের মূল গল্প এটিই।

No comments:

Post a Comment