‘আমাদের সমাজ একটা ফুল বাগান যেখানে নিদিষ্ট এক রঙের ফুল রাখলে তা প্রাণবন্ত দেখাবে না। ভিন্ন ভিন্ন রঙের ফুল যেমন একটি বাগানকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে, তেমন সমাজে বিভিন্ন লিঙ্গ, শ্রেণি, পেশা ও মতাদর্শের মানুষ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। পুরুষ, নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) যেমন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তেমনি ট্রান্সজেন্ডারও একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
একটা সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের এমনটা হতেই পারে যে, সে একজন পুরুষ বা নারী হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও আদতে তার মন-মানসিকতা ভিন্ন। এটা একটি প্রাকৃতিক বিষয়, এ বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই। একজন নারী, পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে আমরা যেভাবে সম্মান করি, ট্রান্সজেন্ডারদেরকেও আমাদের তেমনি স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। একজন ট্রান্সজেন্ডার হতে পারে আমাদের পরিচিত বা পরিবারের একজন। আর এটা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এমন একটি প্রক্রিয়া যা বন্ধ করা সম্ভব না বরং এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে আমাদের মানিয়ে নেয়া উচিত।’
ট্রান্সজেন্ডার একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া উল্লেখ করে এমনটাই বলেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিল আফরোজ খানম। বুধবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সংগঠন বিইউ রেডিও এর উদ্যোগে আর্টিকেল-১৯ এর সহযোগিতায় 'FOR STUDENT GROUP-UPCOMING POLITICAL LEADERS ON CIVIC ENGAGEMENT AND HUMAN RIGHTS' শিরোনামের কর্মশালায় তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক (খণ্ডকালীন) আসিফ মাহাতাব উৎস সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করে বলেন, আসিফ মাহাতাব একজন দর্শন বিভাগের শিক্ষক, তার (আসিফ মাহাতাব) মানুষের শরীরবৃত্তীয় জ্ঞানের অভাব রয়েছে বিধায় সে এই বিষয়টাকে এতটা নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছে।
এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে প্রশ্ন তুললে ওই শিক্ষিকা বলেন, এই একদিনের সেশনে তোমাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন সম্ভব নয় তার জন্য তোমাদের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে হবে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী,বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ মো. আরিফ হোসেন। বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিলআফরোজ খানম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মারুফা আক্তার , রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুস্মিতা রায়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সকাল ও বিকেলে উন্নত মানের নাস্তা ও দুপুরে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের জনপ্রতি নগদ ১৫০০ টাকা দেয়া হয়। উক্ত কর্মশালায় আর্থিক সহযোগিতায় ছিলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল।
উল্লেখ্য, কর্মশালার আয়োজক আর্টিকেল-১৯ আর্থিক সহযোগিতায় থাকা প্লান ইন্টারন্যাশনাল গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও LGBTQ নিয়ে সারাবিশ্ব্যাপী তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। কর্মশালায় যাতায়াতকালে আর্টিকেল ১৯-এর অফিসার মরিয়ম শেলি ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল এর কর্মকর্তারা ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত একটি প্রাইভেট কার ব্যবহার করেন।
No comments:
Post a Comment