Tuesday, September 27

প্রেস বিজ্ঞপ্তি সিলেট শহরে যৌন সংখ্যালঘু সমকামী হিজরা সম্প্রদায়ের এক ব্যাক্তিকে হত্যার ঘটনায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বিআইএইচআর এবং জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশে এর উদ্বেগ প্রকাশ।

সিলেট শহরে সমকামী ট্রান্সজেন্ডার পুরুষকে হত্যার ঘটনায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রাইটস (বিআইএইচআর) এবং জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিআইএইচআর এবং জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ সিলেট শহরে যৌন সংখ্যালঘু সমকামী হিজড়া ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার করে নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক বিচারে সোপর্দ করে দায়ীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জোড় দাবী জানিয়েছে।

গত ২৫ শে সেপ্টেম্বর২০২২ খ্রীষ্টাব্দ তারিখে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম আজকের পত্রিকার প্রকাশিত খবর আনুযায়ী জানা যায় যে, সিলেটে এক যৌন সংখ্যালঘু সমকামী ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিকে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ রবিবার ভোরে নগরীর সুবহানীঘাট সবজি বাজার সংলগ্ন একটি খোলা জায়গা থেকে পুলিশ ভাগ্যাহত সমকামী ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে।

নিহত তুষার মিয়া ( ২০) ময়মনসিংহ জেলার আবুল হাসেমের ছেলে সিলেট নগরীর সাজু মিয়ার বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করত।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী থানাধীন সুবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জগৎজোতি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি পত্রিকাকে বলেন, লাশের গলায় আচরের চিহ্ন রয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে গেছে।

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী বলেন, "তুষার নিজেকে হিজড়া হিসেবে পরিচয় প্রদান করে ছদ্মবেশ ধারণ করতো। সে হিজড়াদের সাথে চলাফেরা করতো। ভোরবেলায় সে সহ আরো ৩ থেকে ৪ জন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে তাকে গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হাতাহাতির আলামতও পাওয়া গেছে। জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তুষারের বড় ভাই হিমেল আহমেদ রাফি জানান, ময়নাতদন্ত শেষে তুষার মরদেহ দাফনের জন্য শহরের মানিকপুর পাহাড়ে নিয়ে এসেছেন। দাফন শেষে তারা হত্যা মামলা করবেন।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকের পর তুষারের পড়ালেখা তেমন একটা এগোয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তুষারকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো যায়নি,ধীরে ধীরে সে হিজড়া দলের সঙ্গে যুক্ত হয়।

এক পর্যায়ে,তুষার হিজড়াদের মতো পোশাক পরতে শুরু করে এবং হিজড়া বন্ধুদের সাথে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ শনিবার রাত ৯:৩০ ঘটিকার দিকে তার বন্ধুরা তাকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় এবং ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ রবিবার সকাল ৯ টার দিকে শহরের সোবহানীঘাটে তুষারের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

বিআইএইচআর এবং জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশের মহাসচিব এবং এলজিবিটি অধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে তুষার হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার আহবান জানিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট শাহনূর ইসলাম বিশ্বাস করেন যে, উল্লিখিত হত্যার ঘটনা বাংলাদেশে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়;বরং সারা দেশে ট্রান্সজেন্ডার সহ এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে চলমান বৈষম্য, হত্যা, আঘাত ও মানবাধিকার লংঘন বিষয়ের একটি অংশ মাত্র।

অ্যাডভোকেট শাহানুর আরও মনে করেন,যদিও বাংলাদেশ সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের কিছু উদ্যোগ নিয়েছে,কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।

তদুপরি,অ্যাডভোকেট শাহানুর মনে করেন যে, বাড়ি থেকে সমাজ এবং সমাজ থেকে রাষ্ট্র ,সর্বত্র, হিজড়া সহ এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা বৈষম্যসহ অন্যান্য ধরণের যেসকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্মুখীন হচ্ছে সেসব সামাজিক অগ্রহণযোগ্যতা ও অসহিষ্ণুতার কারণে সেসবের অধিকাংশ ঘটনাই রয়ে জনসম্মুখের অগোচরে রয়ে যাচ্ছে।


সর্বোপরি, অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম বাংলাদেশ দণ্ডবিধির বৈষম্যমূলক ধারা ৩৭৭ বাতিলের দাবি জানান।

No comments:

Post a Comment