Saturday, October 1

তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনঃ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবীতে জুম্মা ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি নির্যাতন!!!

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে গত ৭ আগস্ট ২০১১ ইং তারিখে পার্বত্য চট্রগ্রামের খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের আনুমানিক ৯০০ (নয়শত) জুম্মা ছাত্র সম্বিলিত একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে আইন শৃংখলা রক্ষার অজুহাতে নিরাপত্তা বাহিনীর বেদম প্রহার ও নির্মম নির্যাতনে ২২ (বাইশ) জন ছাত্র আহত হয়েছে তবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বিক্ষোভকারী ছাত্রের উপর আক্রমণ ও প্রহারের অভিযোগটি সুকৌশলে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছেন


দেশের অন্যতম নিরপেক্ষ বাংলা পত্রিকা মাসিক দোয়েল এর আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচারডি), দি হেগ, নেদারল্যান্ডস এর বাংলাদেশ অবজারভার এডভোকেট শাহানুর ইসলাম (সৈকত) এর নেতত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পূর্ণ তথ্যানুসন্ধান দল গত ১৯ শে আগস্ট ২০১১ ইং সাল থেকে ২২ শে আগস্ট ২০১১ ইং তারিখ পর্যন্ত ঘটনাটি সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধান করেন। এসময় তথ্যানুসন্ধান দলের সদস্যগন নির্যাতিত ব্যক্তি, প্রত্যক্ষদর্শী, আইন শ্বংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তা সুপারিশসহ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেন জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচারডি) প্রথম মানবাধিকার সংগঠন যারা ঘটনাটি সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধান করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন থ্যানুসন্ধান কালে সাদা পোশাকের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সর্বদা থ্যানুসন্ধান দলকে অনুসরন করতে থাকে এবং  থ্যানুসন্ধান দলের প্রধান এডভোকেট শাহানুর ইসলাম (সৈকত) কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন  প্রশ্ন করে একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
 

স্থানীয় প্রশাসন বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রণকারী জুম্মা ছাত্রদের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বহিনী কর্তৃক নির্মম নির্যাতনসহ কৃত অন্যান্য সকল অপরাধমূলক কাজ অস্বীকার করে জুম্মা ছাত্ররা ভবিষ্যতে যদি আবার আদিবাসিদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে কোন বিক্ষোভ কমসুচির আয়োজন করে তবে তা পুলিশ প্রশাসন কঠোর হস্তে দমন করবে, এমনকি তাতে আন্দলোনকারীদের ভবিষ্যৎ জীবন নষ্ট হতে পারে বলেও হুমকি প্রদান করেন স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ সদস্যদের দ্বারা কৃত নির্যাতনসহ সকল অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড অস্বীকার করায় এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক কোন ব্যবস্থা করা হয় নি এবং ভবিষ্যতেও কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা করা হবে না, বরং তাদের পদন্নতি দিয়ে পুরঃস্কিত করা হবে।


চলতি বছরেরে ২৬ জুলাই বিদেশী কূটনীতিকদের সামনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনির প্রদত্ত বক্তব্যের প্রতিবাদে এবং আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবয়নের দাবীতে ৭ আগস্ট ২০১১ ইং তারিখে পার্বত্য চট্রগ্রামের ৮টি আদিবাসী সামাজিক  ছাত্র সংগঠন যথাঃ ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম (টিসিএফ), বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিএমসি), তঞ্চঙ্গা ছাত্র কল্যাণ সংস্থা, ম্রো স্টুডেন্টস কাউন্সিল, বাংলাদেশ খ্যাং স্টুডেন্টস কাউন্সিল, চাক স্টুডেন্টস কাউন্সিল, বাংলাদেশ বম স্টুডেন্টস কাউন্সিল এবং খুমি স্টুডেন্টস কাউন্সিল এর ডাকে এ বিক্ষোভ  মিছিল ও সমাবেশ তিন পার্বত্য জেলায় অনুষ্ঠিত  হয়।



নির্যাতিত ছাত্র   প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে ঘটনার দিন সকাল আনুমানিক ১১ টার সময় জুম্মা ছাত্ররা শহরের শাপলা চত্বরের উদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ গেট থেকে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল আরম্ভ করতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট এবং কোতোয়ালি পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তাসহ আনুমানিক  ৫০-৬০ জন পুলিশ সদস্য কলেজ গেটের সামনে তাদেরকে বাঁধা প্রদান করেন সময় পুলিশের সাথে বাক-বিতন্ডা হলে পুলিশ রাজিব ত্রিপুরা ও অমর সিংহ চাকমা নামক দুই জুম্মা ছাত্রকে জোরপূর্বক আটক করে। পরবর্তীতে, ছাত্র-ছাত্রীদের তোপের মুখে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। এময় পুলিশ প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের মিছিল সহযোগে শাপলা চত্বর পর্যন্ত না গিয়ে চেঙ্গিস স্কয়ার পর্যন্ত যাওয়ার নির্দেশ দেন।


পুলিশের নির্দেশ মেনে ছাত্র-ছাত্রীরা  কলেজ গেট থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল সহযোগে সামনের চেঙ্গিস স্কয়ারের দিকে এগুতে থাকলে পুলিশ সদস্যরা কোন প্রকার উস্কানি ছাড়া হঠাৎ বিক্ষোভকারিদের উপর লাঠি চার্জ শুরু করে। একই সাথে ছাত্রদের কিল, ঘুষি, লাথি এবং মেয়ে বিক্ষোভকারিদের টানা হিঁচড়া করতে থাকেএসময় পুলিশ লাঠি দ্বারা চৈতি চাকমা ও তিথি ত্রিপুরা নামক দুই ছাত্রী মাথা ও ত্লপেটে আঘাত করলে তারা  বেহুঁশ হয়ে পড়ে। এতে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে সামনের দিকে এগুতে থাকলে পুলিশ মিছিলের উপর বেপরোয়াভাবে লাঠি চার্জ করতে থাকে। এতে ২২ জন জুম্মা ছাত্র আহত হয়, যাদের মধ্যে চার জন মারাত্বকভাবে আহত হনএ সময় কিছু বহিরাগত বাঙ্গালী দুস্কৃতিকারী পিছন থেকে পুলিশের দিকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ধাওয়া -পালটা ধাওয়া  শুরু হয়। এতে চার পুলিশ সদস্যও সামান্য আহত হয় বলে পুলিশ প্রশাসন তথ্যানুসন্ধান দলকে জানান।

পরবর্তীতে, মিছিল চেঙ্গিস স্কয়ারে পৌছলে পুলিশ তাদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে আবারও মিছিলকারী ছাত্র -ছাত্রীদের উপর বুট দ্বারা লাথি এবং লাঠি ও রাইফেলের বাট দিয়ে বেধড়ক মারপিট শুরু করে। এতে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ গেট সংলগ্ন রাস্তায় বৈদ্যুতিক খুটি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে সর্বপ্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় । এ সময় পুলিশসদস্য কর্তৃক ফের বাধাপ্রাপ্ত ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়ন করে কলেজ প্রাঙ্গণ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পুলিশ ও সেনা সদস্য কতৃক প্রায় দেড় ঘন্টা অবরুদ্ধ রাখার পর পুলিশ প্রশাসন, কলেজ কতৃপক্ষ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসন ও কলেজ কতৃপক্ষের সাথে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা পরের দিন ৮ আগস্ট, ২০১১ ইং তারিখে শান্তি আলোচনায় রাজি শর্তে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা কলেজ  ক্যাম্পাস খুলে দেন। 

ছাত্ররা বাড়ি ফিরে যাবার সময় সেনা ও পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যমুলকভাবে কলেজ গেটে ছাত্রছাত্রীদের দেহ তল্লাশী ও জিঙ্গাসাবাদ করতে থাকে। এসময় রাজেশ ত্রিপুরা নামক এক ছাত্রকে কলেজ গেট থেকে ধরে উদ্দেশ্যমুলকভাবে চেঙ্গিস স্কয়ারে নিয়ে ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য মিলে কিল, ঘুষি, বুট দিয়ে লাথি মারাসহ লাঠি ও রাইফেলের বাট দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে, ফলে সে মারাত্বকভাবে আহত হন সাথে থাকা কলেজের ছাত্র পরিচয় পত্র দেখানোর পরও পুলিশ সদস্যা তাকে অমানবিক নির্যাতন করে। এতে সে মারাত্তকভবে আহত হয়। পরবর্তীতে লেজের অধ্যক্ষের নিকট থেকে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পুলিশ সদস্যরা তাকে ছেড়ে দেয় বলে নির্যাতিত ছাত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা তথ্যানুসন্ধান দলকে জানান।

ঘটনাটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং এই লজ্জাকর মানবাধিকার লঙ্ঘন বিনা প্রতিকারে মেনে নেওয়া যায় না শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের অধিকার একটি অনস্বীকার্য মৌলিক মানবাধিকার এবং পুলিশ কর্তৃক উল্লেখিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে বাঁধা প্রদান ও বিক্ষোভকাররিদের নির্যাতন করা বাংলাদেশ সংবিধান ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিসমূহের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনবাংলাদেশ সংবিধানের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকেরকের সমবেত হওয়ার ও শান্তিপুন জনসমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া, সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা পত্রের ২০ নং ধারা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির ২১ নং ধারায় শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত ও সমাবেত হওয়ার অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। 

আবার বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ (৫) নং অনুচ্ছেদে নির্যাতনকে সম্পূর্নভাবে নিশিদ্ধ করা হয়েছেতাছাড়া সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা পত্রের ০৫ নং ধারা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির ০৭ নং ধারা সকল প্রকার নির্যতনকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছেএছাড়া নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চুক্তি-১৯৮৪ তে নির্যাতনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছেউল্লেখিত চুক্তিগুলোর সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ চুক্তিগুলো মানতে বাধ্য অর্থাৎ শন্তিপূর্ণ  বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আধিকার নিশ্চিত করা ও নির্যাতন দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে বাধ্য

  
আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে গত ৭ আগস্ট ২০১১ ইং তারিখে পার্বত্য চট্রগ্রামের খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের আনুমানিক ৯০০ (নয়শ) জুম্মা ছাত্র সম্বিলিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে আইন শৃংখলা রক্ষার অজুহাতে নিরাপত্তা বাহিনীর বেদম প্রহার নির্মম নির্যাতনে ২২ (বাইশ) জন ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আদিবাসীদের মৌলিক মানবাধিকার অর্জনের কণ্ঠস্বর চিরতরে স্তব্ধ করার দীর্ঘ পরিকল্পনা সফল করার একটি স্পষ্ট প্রয়াস মাত্র বলে জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচআরডি) মনে করেজাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচআরডি) উপরোল্লিখিত মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনার দ্রুত সম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যাক্তিদের বিরদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা  গ্রহণ, নির্যাতিত ছাত্রদের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান ও উপর্যুক্ত ক্ষতিপুরনসহ তাদের পুনর্বাসনের জোর দাবী জানাচ্ছে

No comments:

Post a Comment